কুমিল্লা দেবীদ্বার উপজেলার পৌর বিনাইপার এলাকায় জোবেদা বেগম নামে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ মহিলা ছাতা হাতে তার স্বপ্নের ঘর ডুবে যাচ্ছে এভাবেই দেখাচ্ছিলেন তিনি। তখন অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে বলতে শোনা গেছে তার ঘর থেকে তিনি তেমন কিছুই বের করে নিয়ে আসতে পারেনি। কেমন করে থাকবেন তিনি।
তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানিতে কুমিল্লার দুঃখ খ্যাত গোমতী নদী এখন পানিতে টইটম্বুর। নদী ছাড়িয়ে পানি এখন দুকোলের বাঁধ ছাড়িয়ে যাবার উপক্রম। ঘর ছেড়েছে বেড়িবাঁধের ভিতরে বসবাস করা হাজারো মানুষ। পাড়ি জমিয়েছে কেউ নদীর বাঁধে আবার কেউ স্থানীয় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে।
জেলায় গোমতী নদী বয়ে যাওয়া উপজেলা গুলোর মধ্যে বন্যা আশঙ্কায় সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে আদর্শ সদর, দেবীদ্বার, বুড়িচং ও মুরাদনগর। এলাকার লোকজন সময় কাটাচ্ছে বন্যা আতঙ্কে। টানা বৃষ্টির ফলে ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকায় গোমতীর পানি বিপদ সীমার ১০৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধের কিছু অংশে ফাটল দেখা দিলেও স্থানীয় যুব সমাজের লোকজন তা মেরামতে কাজ করতে দেখা গেছে। কিন্তু কুমিল্লার কোথাও ভাঙ্গন না থাকলেও বন্যার সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে কুমিল্লাবাসী।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) জেলার দেবীদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গোমতী নদীর বিভিন্ন অংশে মাটি খেকুদের ডায়বেশন করা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে, স্থানীয় লোকজন ও পাউবি কতৃপক্ষ মেরামত করছে এবং বাঁধের কোথাও কোন ধরনের লিকেজ থাকলে স্থানীয়রা তা বন্ধ করছে। তাছাড়া বাঁধের ভিতর বসবাস করা ঘরবাড়িগুলোতে পানি উঠে যাওয়ায় ঘরছেড়ে নদীর বাঁধে, স্থানীয় আশ্রয় কেন্দ্রে ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিচ্ছে পানিবন্দী মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, গোমতী নদীতে পানি বৃদ্ধি ও বিভিন্ন যায়গায় লিকেজের সংবাদে বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছি। পানিবন্দী মানুষদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীর পাড়ের মানুষজনকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহবান করেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গোমতী নদী রক্ষা বাঁধের যেখানে সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেখানে মাটি ভর্তি বস্তা দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে বিপৎসীমা অতিক্রম করে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।