কুমিল্লার দেবীদ্বারে দেড়শো বছরের পুরনো চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বী ৩০ পরিবার ৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনার তদন্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম অবরুদ্ধ লোকদের খোঁজ খবর নিতে যেয়ে রাস্তা না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। এসময় বাড়িতে ঢুকার রাস্তা খুঁজে পাননি তিনি। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগীতায় একটি ব্যাঞ্চ এনে তার উপর দিয়ে সীমানাপ্রাচীর ও তালগাছের চিপা দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে আসা যাওয়া করতে হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে সোমবার বিকেলে উপজেলার ১০নং গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের পদ্মকোট গ্রামের ডাঃ নিবারন চন্দ্র সূত্র ধরের বাড়িতে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, সূত্রধর বাড়ির লোকদের আসা যাওয়ার রাস্তাটি প্রায় ১৫০ বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসলেও গত জানুয়ারী মাসে রাস্তার পাশের জমির মালিক মরহুম আবিদ আলী সরকারের ছেলেরা রাস্তাসহ সীমানা প্রাচীর গড়ে তুলেন এতে প্রায় ৩০টি সনাতন ধর্মালম্বী পরিবার গৃহবন্দী হয়ে পড়েন। অপরদিকে শ্রী-শ্রী শ্যামাকালী মন্দীরেও পূঁজারী ও ভক্তরা আসা যাওয়া করতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে যেতে পারছেনা, কেউ মারা গেলে শ্মশানে নিতে পারছিনা, অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এমনকি ছেলে মেয়েদের বিয়েসাধির ক্ষেত্রে দেখাশুনা করতে বর বা কণে পক্ষ বাড়িতে আসতে পারছেনা। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একাধিকবার সালিসেও রাস্তা অবমুক্ত করার বিষয়টি সমাধান সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ভোক্তভূগীরা ধীরেন্দ্র সূত্রধরকে আহবায়ক করে ‘পদ্মকোট রাস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটি’ গঠন করেন। ওই কমিটির পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে রাস্তা অবমুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে গৃহবন্দী লোকজন বিকল্প পথ হিসেবে পাশের বাড়ির উঠান দিয়ে আসা যাওয়া করত। সে রাস্তাটিও ৩/৪দিন পূর্বে কাঁটাবেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়।
পদ্মকোট রাস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটি’র আহবায়ক ধীরেন্দ্র সূত্রধর বলেন, গত সোমবার (৪ আগস্ট) ‘পদ্মকোট রাস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটি’র নেতৃবৃন্দরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে দেখা করেন এবং ঘটনার সমাধান না করলে তারা ইউএনও অফিসের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ডেকে আনেন এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলামকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিলে তদন্তে এসে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম অবরুদ্ধ লোকদের খোঁজ খবর নিতে যেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। বাড়িতে ঢুকতে যেয়ে ঢুকার রাস্তা খুঁজে পাননি তিনি। পরে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগীতায় তার বাড়ির পাশে একটি ব্যাঞ্চ এনে তার উপর সদ্য নির্মিত দেয়াল এবং তাল গাছের চিপা দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়েছে। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন। জমির মালিক মরহুম আবিদ আলী সরকারের ছেলেরা সবাই দেশের বাহিরে থাকেন।
মঙ্গলবার বিকেলে মরহুম আবিদ আলী সরকারের ছেলে নেদারল্যান্ড প্রবাসী জামাল উদ্দিন সরকারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমাদের এখানে কেনা পৈত্রিক সম্পত্তি এক একর ৫ শতাংশ জমি আছে। মাপে সাড়ে ৭ শতাংশ জমি পাচ্ছিনা। তার পরও জমির উত্তর পাশে বর্তমান চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্নে ৪ ফুট প্রশস্ত জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। চেয়ারম্যান সেখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। পশ্চিম এবং দক্ষিণ পাশে প্রচুর খাস জমি আছে, সে জমি থেকে ২০/২৫ ফুট জমি ভরাট করে নিলে রাস্তার আর কোন সমস্যা থাকেনা। সেটা না করে সবাই আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তির উপরদিয়ে রাস্তা চায়। এর আগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দীর সরিয়ে জমি নিতে তাদের মন্দীর তৈরী করে দিয়েছি।
১০নং গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, জামাল সাহেবরা অত্যন্ত অমানবিকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় দেড়শত বছরের চলাচলের রাস্তাবন্ধ করে ওই পরিবারগুলোকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। আমরা একই গ্রামের কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব রোশন আলী মাষ্টারসহ এলাকার গন্যমান্য লোকদের সহযোগীতায় একাধিকবার চেষ্টা করেও বিষয়টি সমাধানে ব্যর্থ হয়েছি।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। জমির মালিক পক্ষের কেউ দেশে না থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে শিঘ্রই তাদের ওয়ারিশসহ উভয় পক্ষকে ডেকে এনে তাদের পরামর্শক্রমেই রাস্তা অবমুক্ত করার চেষ্টা করব।
দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনে এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্যাপশন: তদন্তে আসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম অবরুদ্ধ লোকদের খোঁজ খবর নিতে যেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। বাড়িতে ঢুকতে যেয়ে ঢুকার রাস্তা খুঁজে পাননি। পরে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগীতায় একটি ব্যাঞ্চ এনে তার উপর পা’রেখে তদন্ত কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে দেয়াল এবং তাল গাছের চিপা দিয়ে আসা যাওয়া করতে করতে দেখা যাচ্ছে ।