তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে ডাক বিভাগ, ডিজিটাল সুবিধা পাচ্ছেনা গ্রাহক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে চিঠি প্রত্যাশি গ্রাহকের হৃদয়ের স্পন্ধনে ভাটা পড়েছে। কর্মচারিদের বাড়েনি বেতন ভাতাসহ নানা সুযোগ সুবিধা। সরেজমিনে কয়েকটি পোষ্ট অফিস পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ পোষ্ট অফিস ব্যবহারের অনুপযোগী, পরিত্যাক্ত এবং বন্ধ। পোষ্ট মাষ্টার কাজ করেন তাদের নিজ নিজ বাড়িতে। বেতন ভাতাসহ নানা সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত থাকার কথাও জানান তারা।
সংশ্লিষ্ট পোষ্ট অফিসের কর্মচারিরা জানান, ডাক বিভাগ দেশব্যাপী সুবিস্মৃত নেটওয়ার্কে গড়া বহুমুখী মৌলিক ও অন্যতম সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাধৃত। সরকারি ডাক সেবা প্রদানকারী অন্যতম আর্থিক ও তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক ডিজিটাল ডাক সেবা প্রদানে প্রতিষ্ঠানটি আদীকাল থেকেই দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর সেবা প্রদান করে আসছে। ডাক বিভাগ শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরের জনগণের জন্য দ্রুততার সাথে নির্ভরযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান।
দেবীদ্বার উপজেলার একটি প্রধান ডাকঘর ও ৩টি সাব পোষ্ট অফিসের তত্বাবধানে ৪৩টি পোষ্ট অফিস রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দেবীদ্বার প্রধান ডাকঘর কোড নং- ৩৫৩০ এর অধিনে ৯টি পোষ্ট অফিস, গঙ্গামন্ডল ডাকঘর সাব অফিস’র কোড নং- ৩৫৩১ এর তত্বাবধানে ১৭টি (এগুলোর মধ্যে দেবীদ্বার উপজেলার ৯টি, বুড়িচং উপজেলার ৭টি, ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলার ১টিসহ মোট ১৭টি) পোষ্ট অফিস। ধামতি সাব পোষ্ট অফিসের কোড নং- ৩৫৩৩ এর নিয়ন্ত্রণে ৪টি এবং শালঘর সাব পোষ্ট অফিসের কোড নং- ৩৫৩২ এর নিয়ন্ত্রণে ১টিসহ ৩১টি, বাকী ১২টির নিয়ন্ত্রণে মুরাদনগর ৫টি ও চান্দিনা উপজেলা ডাক বিভাগ ৫টি।
পৌর এলাকার নাগরিক মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, দেবীদ্বারের অধিকাংশ পোষ্ট অফিস উর্ধতন কোন কর্মকর্তা না আসলে অফিস খুলেন না, সাধারন নাগরিকগন স্থানীয় পোষ্ট অফিসে সুবিধা না পেয়ে উপজেলা সদরে চলে যান। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ সুযোগ প্রদানে ল্যাপটপ, প্রিন্টার্সসহ নানা ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় ডাক বিভাগের পোষ্ট অফিসগুলোর উন্নয়ন করা হলেও উদ্যোক্তাদের নিস্ক্রীয়তার কারনে তথ্যপ্রযুক্তির ধারায় নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেনা অধিকাংশ গ্রাহক। ডাক বিভাগকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে সরকার সর্বদা সচেষ্ট কিন্তু অধিকাংশ পোষ্ট অফিসের উদ্যোক্তাগন সরকারের দেয়া ল্যাপটপ, প্রিন্টার্স নাগরিক সেবাদান না করে নিজ বাড়িতে রেখে ব্যাক্তিগত সেবা নিচ্ছেন।
বারেরা পোষ্ট মাষ্টার সালমা আক্তার জানান, দেবীদ্বারে পোষ্ট অফিসগুলোর মধ্যে বারেরাসহ ৪টি সরকারের সহায়তায় পাকা পোষ্ট অফিস থাকলেও বাকীগুলো ভাড়ায় অথবা সংশ্লিষ্ট পোষ্ট মাষ্টারগন নিজ বাড়িকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। সরকার ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় নাগরিক সেবাদানে ল্যাপটপ, প্রিন্টার্স দিয়েছে। সেগুলো ব্যবহার হচ্ছেনা। সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের দখলেই রেখে দিয়েছেন। বারেরা পোষ্ট অফিসে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় উদ্যোক্তা কাজী দুলাল মিয়ার তত্বাবধানে ল্যাপটপ, প্রিন্টার্সগুলো রয়েছে। অফিস না খোলার বিষয়ে তিনি জানান, রেজিস্ট্রি চিঠি, চাকরির ইন্টার ভিউর কার্ড আসলে বাড়ি থেকে গ্রাহক নিয়ে যান।
চরবাকর পোষ্ট মাষ্টার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক সরকার জানান, মহাসড়কের পাশে আমার পোষ্ট অফিস ডাক বিভাগের গাড়ি গত ১৫ বছরেও চিঠিপত্র নেয়া বা দেয়ার কোন দায়িত্ব পালন করেনি। সবই নিজ দায়িত্বে করতে হয়। অফিস বন্ধের বিষয়ে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট ইনিস্পেক্টরের পরামর্শে নিজ বাড়িতেই পোষ্ট অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছি। তবে উদ্যোক্তা মো. আল আমিনের গাফলতিতে ল্যাপটপ ও প্রিন্টার্সের মাধ্যমে নাগরিকদের ডিজিটাল সুবিধা দিতে পারছিনা।
দেবীদ্বার পোষ্ট মাষ্টার ইকবাল হোসেন মজুমদার জানান, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের প্রধান পরিসেবাসমূহের মধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ডাক দ্রব্যাদি গ্রহণ, পরিবহন ও বিলিকরণ, রেজিস্ট্রেশন সেবা, ভ্যালু পেয়েবল (ভিপি) সেবা, বীমা সেবা, পার্সেল সেবা, বুক পোস্ট (বুক প্যাকেট ও প্যাটার্ণ প্যাকেট), রেজিস্টার্ড সংবাদপত্র, মানি অর্ডার সেবা, এপ্রেস সেবা (জিইপি ও ইএমএস), ই-পোস্ট এবং ইন্টেল পোস্ট সেবা প্রদান করাসহ অফিসিয়াল চিঠি বিলি, এসবি, এফডি, সঞ্চয়পত্র, অনলাইনে আদান প্রদান (ইএমও) সেবা দিয়ে থাকি। এখন মোবাইল ইন্টার্নেট সুবিধায় চিঠি প্রত্যাশি মানুষের চাপ এবং বিকাশ সেবার কারনে মানি অর্ডারের চাপ নেই বললেই চলে। তবে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় নাগরিক সেবাদানের সুযোগ বেড়েছে।