কুমিল্লার দেবীদ্বার আব্দুল্লাহপুর হাজী আমীর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের দু’পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে কোন ধরনের সংঘাত ছাড়াই শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিদায়ি শিক্ষককে বহনকারী হেলিকপ্টার আকাশে উড়লেও মাঠে নামতে দেয়া হয়নি, বিশাল গাড়িবহরও চলেনি, করুণ সূরে বাদ্যযন্ত্রও বাজেনি। ঝরা ফুলের পাপড়ি ছিটানো বৃষ্টিতে এবং শিক্ষার্থীদের করতালির মাধ্যমে আয়োজক ও সমর্থকগনের সহযোগীতায় প্রিয় শিক্ষককে মঞ্চে উঠানো হয়।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১২টা থেকে হাজী আমির উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ হারুনুর রশিদ এর শেষ কর্মদিবসে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হেলিকপ্টরে করে আসা বিদায়ি শিক্ষকের নিজগ্রাম পৌর এলাকার ভিংলাবাড়িতে নেমে সংক্ষিপ্ত গাড়িবহরে একটি বর্নাঢ্য র্যালীসহ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব দ্বিধাবিভক্তির জের ধরে বিদায় সংবর্ধনায় পক্ষ বি-পক্ষ তৈরী হয়েছিল।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জাকির হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে এবং সহকারী শিক্ষক আক্তার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক সবুর আহমদ খান, মোঃ নান্নুমিয়া সরকার, মোঃ জসীম উদ্দিন খান, মোঃ মোসলেম উদ্দিন, মোঃ মজিবুর রহমান, মোঃ আবুল খায়ের, সাদ্দাম হোসেন, মোঃ কামরুজ্জামান জুয়েল, আনিসুর রহমান মেম্বার, ইউনুছ বাহাদুর, আহাম্মদ সোহেল, সাইফুল ইসলাম শামিম প্রমূখ। এসময় বিদায়ী শিক্ষককে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকার পুরস্কার ও ক্রেষ্ট উপহার দেওয়া হয়েছে।
বিদায়ি সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ হারুনুর রশিদ প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি তোমাদের কতটুকু শিক্ষা দিতে পেরেছি জানিনা। তবে যে টুকু দিয়েছি মন থেকেই দিয়েছি। তোমরা যদি আমার সামান্যতম শিক্ষা গ্রহন করো তা হলে সে শিক্ষার গুনগত মান বজায় রেখে, দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে- তোমাদের শিক্ষা, তোমাদের মেধা, তোমাদের শ্রম বিকশিত করবে দেশ তথা বিশ্ববাসীর কল্যানে। আমার সকল শিক্ষার্থীদের প্রতি রইলো শুভকমনা। এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, ১৯৯১ থেকে এ পর্যন্ত ৩২ বছর যাবৎ এ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে শ্রম দিয়ে গেছি তা আপনারা জানেন। ২০০১ সালে এ এলাকার কিছু পথভ্রষ্ট লোকের সিদ্ধান্তের কারনে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন স্থবির হয়ে পরে, তারা বিদ্যালয়কে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে। আজ ২০২৩ সালে তাদের শাখা প্রশাখা এত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেই আজকের বিদ্যালয়ের এমন অবস্থা। আপনারা এ সম্পর্কে সবাই অবগত আছেন, তবুও বিদায় বেলা আমি আপনাদেরকে বলবো বিদ্যালয়টিকে ধ্বংস থেকে বাঁচান। শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠান ঘিরে কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি, এই কয়েকটা দিন আমি কতটা মানসিক চাপে ছিলাম তা বুঝাতে পারবো না।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমলকৃষ্ণ ধর জানান, গতকাল উভয় পক্ষকে নিয়ে এক বৈঠকে সমোঝোতা করে দিয়েছি। তাই আজ কোন ধরনের সংঘাত ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।