কুমিল্লার দেবীদ্বারে নিজ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা দোকান শ্রমিকের গলিত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত অনুমান ৩টায় উপজেলার বাগুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বস্তিতে। সেখানে আবুল হাসেম(৫০) এর থাকার ঘর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত আবুল হাসেম বাগুর ছৈনুদ্দি হাজী বাড়ির মৃত: আব্দুল মজিদের পুত্র। নিহত হাসেম চান্দিনা বাজারে একটি চায়ের দোকানে কাজ করতেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আবুল হাসেম ২০০২ সালে গৃহ ত্যাগ করে নিখোঁজ ছিলেন। আবুল হাসেম নিখোঁজ হওয়ার সময় তার এক পুত্র ও এক কণ্যা সন্তান ছিল। এ সময় তার মায়ের মৃত্যু হলে তার বাবা আরো একটি বিয়ে করেন। তার বাবার দ্বিতীয় সংসারে ৫ কণ্যা সন্তান রয়েছে। এরই মধ্যে আবুল হাসেমের ছেলে সৌদী প্রবাসে চলে যান, কণ্যার বিয়ের পর ঢাকায় স্বামীর সাথে অবস্থান করছেন। বাবা মৃত্যুর পূর্বে তার সমস্ত সম্পত্তি দ্বিতীয় সংসারের ৫ কণ্যার নামে লিখে দিয়ে যান।
প্রায় ৬ মাস পূর্বে হঠাৎ (২২ বছর পর) দেশে ফিরে আসেন নিহত হাসেম। সে মানুষিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। স্থানীয়দের ভাষ্যানুযায়ী আবুল হাসেমের জীবন ছিল বাউন্ডেলে। সে যেখানে যেত সেখানেই বিয়ে করত। এ পর্যন্ত অন্তত ৫টি বিয়ে করেছে বলে জানায় তারা। দেশে আসার কিছুদিন পর চান্দিনা বাজারে একটি চা দোকানে চাকরি নেন এবং বাগুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বস্তিতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি নিজের খাবার নিজেই তৈরী করে খেতেন। গত ১২ এপ্রিল রাত ১০টায় দোকান থেকে বাসায় আসার পর শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত পর্যন্ত তার বাসার দরজা বন্ধ দেখে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ারা খোঁজ নেন। কারন ওই বস্তি এলাকায় রান্নাঘর একটি ছিল, যেখানে বস্তির সব ভাড়াটিয়ারা পর্যায়ক্রমে রান্না করেন। আবুল হাসেমকে রাতে এবং সকালে কেউ রান্না ঘরে দেখতে না পেয়ে তার ঘরে যেয়ে অনেক ডাকা ডাকি করেও সাড়া না পেয়ে সুক্কু মিয়া নামে এক ব্যক্তি স্থানীয়দের নিয়ে দরজার খিল ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে তাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। রাত ৩টায় পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করেন।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার মফিজুর রহমান সরকার জানান, লাশের বিষয় মৃত: আবুল হাসেমের সৌদী প্রবাসী পুত্র ও ঢাকায় অবস্থানরত কণ্যার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বাড়ির লোকদের উপর করনীয় দায়িত্ব ছেড়ে দেন। আবুল হাসেমের সৎ মা মমতাজ বেগম লাশ দাফনের দায়িত্ব নেন এবং কুড়িগ্রামে নানার বাড়িতে অবস্থানরত আবুল হাসেমের অপর এক সংসারের ৭ বছর বয়সী কণ্যা সে আসা পর্যন্ত লাশ দাফনে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক থোয়াই চামং চাক নয়ন জানান, মরদেহে পচন ধরেছে, নাকে মুখে রক্ত বের হওয়া এবং মুখমন্ডলসহ সমস্ত শরীর কালো হয়ে গেছে। লাশ উদ্ধার করে ছোরত হাল রিপোর্ট তৈরীপূর্বক রোববার (১৪এপ্রিল) ময়না তদন্তের জন্য লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পরই মৃত্যুর কারন জানা যাবে।