এসএসসি পরিক্ষা দিয়ে ভৈরবে মামার বাসায় বেড়াতে যাই। শুক্রবার মামা অফিস শেষ করে আমাদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়। আমরা ট্রলারে করে আশুগঞ্জের সোনাচর দ্বীপ গ্রাম ঘুরে ফেরার পথে আমাদের বহনকারী ট্রলারের পিছনদিক থেকে আরেকটি ট্রলার ধাক্কা দিতেই আমাদের বহনকারী ট্রলারটি কাত হয়ে ডুবে যাচ্ছিল। এসময় পাশের জানালা দিয়ে বের হয়ে যাই। আমার দুই হাতে ধরা ছিলো দুই ভাই বোন (ডান হাতে ইভা ও বাম হাতে রাইসুল) প্রথমে ইভা আমার হাত থেকে ছুটে যায়, পরে রাইসুলকেও ধরে রাখতে পারিনি। মাছ ধরার একটি নৌকা আমাকে উদ্ধার করলে আমি তাদের সাহায্য বাবাকে ফোন করি। আমি ভাই-বোনদের হাত ধরে রেখেও শেষ পর্যন্ত তাদের বাঁচাতে পারলাম না। ভৈরবের মেঘনায় সেইদিনের ট্রলারডুবির ঘটনার ভিভিষিকাময় এমনি বর্ণনা দিচ্ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল সোহেলের ভাগ্নী ট্রলারডুবিতে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মারিয়া ইসলাম(১৫)।
ভৈরবে ট্রলারডুবিতে দেবীদ্বারের একই পরিবারের ৫ জনের মধ্যে নিহত ৪ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় দেবীদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ফতেহাবাদ গ্রামের খালেক মেম্বারের বাড়িতে এক শোকাবহ পরিস্থিতিতে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়। ওই পরিবারের বেঁচে যাওয়া কনস্টেবল সোহেলের ভাগ্নি মারিয়া আক্তার(১৫) জীবন বাচাঁতে প্রাণপন চেষ্টাকালে একটি নৌকা এসে তাকে উদ্ধার করায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সে।
গত শুক্রবার (২১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহত পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানা(৩৫) এর স্ত্রী মৌসুমি আক্তার(২৯)কে শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে উদ্ধার পূর্বক গ্রামের বাড়িতে এনে রোববার সকালে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে রোববার (২৩মার্চ) বিকেলে কণ্যা মাহমুদা আক্তার ইভা(৬)কে এবং সোমবার সকালে কনস্টেবল সোহেল রানা(৩৫) ও তার পুত্র রাইসুল ইসলাম(৪)কে উদ্ধার করে সোমবার বাদ জোহর ভৈরব হাইওয়ে পুলিশ ফাড়ির সামনে প্রথম জানাযা ও নিজ গ্রামের বাড়িতে সন্ধ্যা ৭টায় দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে একই সারিতে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। এসময় দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নয়ন মিয়া ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মাসুদ ও ভৈরব হাইওয়ে পুলিশ ফাড়ির এএসআই ইব্রাহিম ও কনস্টেবল সাইফুল ইসলামসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে দাফন-কাফনের জন্য নিহত কনস্টেবল সোহেলের পরিবারের হাতে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
নিহত পুলিশের কনেস্টবল সোহেল রানা ফতেহাবাদ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল আলীমের জেষ্ঠ পুত্র। তিনি কিশোরগঞ্জের ভৈরব হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মেঘনা নদীর রেলসেতু এলাকা থেকে ট্রলার দিয়ে ভ্রমণে বের হন কনেস্টবল সোহেল, তার স্ত্রী, পুত্র, কণ্যা এবং ভাগ্নি মারিয়াসহ পরিবারের ৫ সদস্য। ওই ট্রলারে ২১ জন যাত্রী ছিলেন। ট্রলারটি কয়লার ঘাট এলাকায় আসলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুবাহী বাল্কহেড ধাক্কা দিলে সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বহনকারী ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা ২১ যাত্রীর মধ্যে নিহত হয় ১০ জন। তার মধ্যে পুলিশ সদস্য সোহেল ও তার স্ত্রী, পুত্র কণ্যা সহ একই পরিবারের ৪ সদস্য নিহত হয়।