বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলকালে গত ৪ আগস্ট কুমিল্লার দেবীদ্বারে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত সেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রাজ্জাক রুবেল (৩৩) এর হত্যাকারীদের বাঁচানোর অভিযোগ এনে বিএনপি ২ গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীর পক্ষে নিহত রুবেলের মা’ ও মামলার বাদী হাসনেআরা বেগম শনিবার বিকেলে পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি কুমিল্লা (উঃ) জেলার সদস্য সচিব এএফএম তারেক মূন্সীর নেতৃত্বে বিএনপি’র একটি পক্ষ তারেক মুন্সীর আপন ভাতিজা আওয়ামীলীগের সাবেক দুই বারের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও তার একান্ত ক্যাডার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ আরো কয়েকজন হত্যাকারীকে বাঁচাতে তারেক মুন্সী আমার পায়ে ধরে এবং বড় অংকের টাকার অফার দেয়।
আমি উক্ত প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায়, আমার সন্তানকে যারা গুলিকরে হত্যা করেছে সেই মূল হত্যাকারীদের মামলায় আড়াল করতে তারেক মুন্সী তার অনুসারী দেবীদ্বার গ্রামের আবুল কাশেম, পিতা রেনুমিয়া নামের একজনকে বাদী করে আমার ছেলের চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। শুধু তাই নয়, যাতে আমি মামলা করতে না পারি সে জন্য তারা বিভিন্নভাবে হুমকী, ভয় ও প্রতিবন্ধকতা তৈরির অপচেষ্টা করেছে। এই কাশেম আমাদের পারিবারের কেউ না, তাকে আমরা চিনিওনা। আমরা এই ঘৃণ্য চক্রান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। হত্যাকারীদের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হিসেবে দেবীদ্বারবাসী জানেন। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে খুনিদের বিরুদ্ধে আমি নিজে বাদী হয়ে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নিহত রুবেলের ৮ মাসের গর্ভবতী স্ত্রী হেপী আক্তার, চাচা ইউনুস মিয়া, মো. আবু তাহের, ফুফাতো ভাই মো. রবিউল এবং চাচার কোলে থাকা একমাত্র শিশুকণ্যা নৌফা আক্তার।
অপরদিকে শনিবার (২৪ আগস্ট) রাত ৮টায় স্থানীয় উৎসব কমিউনিটি সেন্টারে উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি দেবীদ্বার উপজেলা সদস্য সচিব কাজী মাসুদুর রহমান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীর সমর্থকরা বিএনপি কুমিল্লা (উঃ) জেলার সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক ও বানোয়াট সংবাদ সম্মেলন করায় তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত পৌর সেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক রুবেল তারেক মূন্সীর সমর্থক ছিলেন। তার মৃত্যুর পর নিহতের পরিবারকে আমরা নানাভাবে সাহায্য সহযোগীতা করে আসছি এবং হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে নিহতের পরিবারকে চাপ দিতে থাকি। নিহতের চাচা আবু তাহের ও ফুফাতো ভাই মো. রবিউল আওয়ামীলীগের সমর্থক এবং খুণী এমপি আবুল কালাম আদাদের কর্মী। তাদের প্ররোচনায় এবং বিপুল অর্থের বিনিময়ে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ ও তার সমর্থক খুণীদের বাঁচাতে মামলা দায়েরে কালক্ষেপন করতে থাকে। এক পর্যায়ে যখন নিশ্চিত হলাম তার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করবেনা তখন আমরা আমাদের কর্মী রুবেল হত্যার ন্যায় বিচারের স্বার্থে এবং দলের স্বার্থে পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাশেম বাদী হয়ে কুমিল্লার আদালতে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদসহ ৭০ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাতনামা ১৮০/২০০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক এমপি মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীর সহযোগীতায় প্রভাব খাটিয়ে নিহতের মাকে বাদী করে দেবীদ্বার থানায় আরো একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, দেবীদ্বার উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. গিয়াস উদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম, পৌর বিএনপির আহবায়ক মহিউদ্দিন মাহফুজ, সদস্য সচিব আব্দুল আলীম পাঠান, কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম শাহিন, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. নুরুজ্জামান, উপজেলা যুবদলের সহ সভাপতি মো. ফারুক হোসেন সরকার, সহ-সভাপতি আব্দুল হাই কায়সার, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মনিরুল ইসলাম নিজামী, সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন, পৌর যুবদল সভাপতি শাহজামান মূন্সী, সাধারন সম্পাদক মফিজুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নাজমুল হাসান, উপজেলা কৃষক দলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম এবং পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও মামলার বাদী আবুল কাসেম প্রমূখ নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলন শেষে রাতে রুবেল হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসীর দাবীতে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট নিহত রুবেল হত্যার ঘটনায় কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি’র সদস্য সচবি এএফএম তারেক মূন্সীর সমর্থক আবুল কাসেমকে বাদী করে সাবেক এমপি মো. আবুল কালাম আজাদসহ এজাহারনামীয় ৭০ জন ও অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জনকে আসামী করে ২০আগস্ট আদালতে মামলা করেন এবং এর একদিন পর সাবেক বিএনপি দলীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সী নিহতের মা’ হাসয়োরা বেগমকে বাদী করে ২১ আগস্ট সাবেক দুই বারের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদকে আসামী করে এজাহারনামীয় ৭০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ১৮০/২০০ জনকে আসামি করে দেবীদ্বার থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করেন। তবে দু’টি মামলাই থানায় রেকর্ড করা হয়েছে।