কুমিল্লায় চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আবদুল হান্নান নামে এক যুবককে (২৮) রশি দিয়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনার ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শনিবার বিকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। জেলার বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের চৌত্তাপুকুরিয়া গ্রামে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ বিকালে জহিরুল ইসলাম নামে ওই ইউপির এক সদস্যকে আটক করেছে। নির্যাতনের শিকার ওই যুবক একই এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরুড়া থানার ওসি ফিরোজ হোসেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি চুরির ঘটনার বিচারের নামে আবদুল হান্নান নামের এক যুবককে দুই পা বেঁধে মাথা নিচের দিকে রেখে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। রশি দিয়ে দুই পা বাধা ঝুলন্ত ওই যুবকের মাথার অংশ দোকানের সামনের একটি ড্রেনের উপর মাটির সাথে রয়েছে। তাকে প্রকাশ্যে জনসমক্ষে লাঠি দিয়ে প্রহার করছেন ইউপি মেম্বার জহিরুল ইসলাম। এসময় তিনি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলেও তাকে রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। স্থানীয়রা জানান, একটি দোকানে শুক্রবার রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজনের তালিকায় রেখে বাড়ি থেকে ওই যুবককে ডেকে এনে অমানবিক নির্যাতন করেছেন। প্রত্যক্ষক্ষদর্শী মোজাম্মেল হক নামের এক ব্যক্তি জানান, হান্নান যদি অপরাধ করে থাকে, তাহলে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা যেতো। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ইউপি সদস্য আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন, অমানবিক নির্যাতন করেছেন।
তবে এ বিষয়ে জহিরুল ইসলাম মেম্বার সাংবাদিকদের বলেন, আবদুল হান্নান এলাকায় চুরির সাথে জড়িত আছে। তাকে অনেকবার আইনের আওতায় দেওয়া হয়েছে, জেল থেকে বের হয়ে আবার চুরি শুরু করে। তাই তাকে সামান্য শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে আবদুল হান্নান অজ্ঞাত স্থানে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আহমেদ জামাল মাসুদ জানান, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর আমি নিজেই যুবকের বাড়িতে যাই, তবে তাকে পাইনি। একজন ইউপি সদস্য এমনটি করতে পারেন না। বিষয়টি আইনশৃংখলা বাহিনী দেখছে, তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।
সন্ধ্যায় বরুড়া থানার ওসি ফিরোজ হোসেন জানান, নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ওই ইউপি সদস্যকে আটক করা হয়েছে। নির্যাতীত আবদুল হান্নানকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তার দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাবরিনা আফরিন মুস্তাফা জানান, নির্যাতনের ব্যাপারে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। তবে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধির (ইউপি সদস্য) এমন কর্মকান্ডের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।