হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা গেছে, এখানে প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ টিকা প্রদান কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। নিয়মিত করোনা টিকাদান কর্মসূচি, বিভিন্ন টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গণটিকা কার্যক্রম চালু রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এখানে রক্ত, মূত্র, মল, এক্স-রে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি সহ সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া এখানে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সরবরাহ সেবা রয়েছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ও হাঁপানি রোগীদের বিশেষ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এখানে এমসিডি কর্নার, শিশুদের জন্য আলাদা এমসিআই কর্নার ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, গর্ভবতী মায়েদের জন্য এএনসি/পিএনসি কর্নার রয়েছে। এখানে নিয়মিত ২৪ ঘন্টা নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে শতাধিক নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তবে, রোগির পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে অফিস চলাকালীন সময়ে সিজারিয়ান অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। আধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নতুন করে সিজারিয়ান অপারেশন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় অসহায় ও হতদরিদ্র রোগিরা বেশ লাভবান হচ্ছে। জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক একজন মেডিকেল অফিসার সহ সাপোর্ট স্টাফরা নিয়োজিত থাকে। রয়েছে আধুনিক ও সু-সজ্জিত স্বাধীনতা সম্মেলন কক্ষ। রোগি হয়রানি বন্ধে বহিরাগতদের আনাগোনা কমাতে নেয়া হয়েছে কার্যকর ব্যবস্থা। বর্তমানে এখানে কমিশন এজেন্ট ও বহিরাগত দালাল সহ মেডিসিন কোম্পানীর প্রতিনিধিদের আনাগোনা ও দৌরাত্ব নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. হাসান মাহমুদ পাটোয়ারী জানান, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিকগুলো নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ এবং সকলের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে এখানকার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া টিপু স্যার অপরিসীম ভূমিকা পালন করছেন। সেবার মানোন্নয়নে এবং রোগি হয়রানি বন্ধে তিনি বেশ সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কিভাবে আরও সহজে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যায়- এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা এবং পরামর্শ প্রদান করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া টিপু স্যার। এখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের কর্মকর্তার সৃজনশীল ভাবনা এবং উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
সেবা নিতে আসা নুরুন নাহার, রাশিদা আক্তার মুন্নি ও হাবিুবর রহমান সহ কয়েকজন রোগির সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ফুল বাগান ও অফিস স্টাফ ও রোগী-স্বজনদের অবসর সময় কাটানোর দর্শনীয় স্থান সৃজনের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়নসহ নানামুখী সৃজনশীল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে কর্তৃপক্ষ। সেবার মান বেড়েছে। এক সময় নিয়মিত চিকিৎসক ও ওষুধ পাওয়া যেত না। এখন হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক রয়েছেন। যারফলে আমরাও আধুনিক ও উন্নত সেবা পাচ্ছি। বিনামূল্যে ওষুধও দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পারিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছি। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা বৈকালিক চিকিৎসা সেবা, রোগির প্রয়োজন অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক সহ ফুলকোর্স ঔষধ সরবরাহ করা হয়।
জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ৩০-৬০ বছর বয়সী নারীদের ভায়া পরীক্ষায় বিশেষ সফলতা অর্জনে বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা হয়েছে এ হাসপাতাল। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক শুদ্ধাচার পুরস্কার অর্জন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগীয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, স্থানীয় সরকার দিবসে উন্নয়ন মেলা-২০২৩ এ দ্বিতীয় পুরস্কার অর্জন সহ জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছে। শীঘ্রই অত্যাধুনিক সিআর মেশিন (এক্স-রে) আসবে। ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় রূপান্তর হওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মো: মুজিবুল হক মুজিব এমপি মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনা, আন্তরিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা আমাদের বড় প্রাপ্তি। জেলা সিভিল সার্জন মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় ও হাসপাতালের সকল চিকিৎসক সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতায় এ সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। সেবার মান ঠিক রেখে আগামীতেও সাফল্যের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই।’