স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘জন্ম এবং মৃত্যু নিবন্ধন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক। ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় শুদ্ধ জন্ম- মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাস্তববায়নেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের আলোর পথ খুঁজে পাবে।
বুধবার (১৭এপ্রিল) দুপুরে দেবীদ্বার উপজেলার ১০ গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক পোনরা শেখ বাড়িতে আয়োজিত ‘জন্ম – মৃত্যু নিবন্ধন ও শুদ্ধ জন্ম- মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রদান ক্যাম্পেইন চলাকালে ভিডিও কলে সংযুক্ত হয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সিআরবিএস প্রকল্পের প্রধান কনসালটেন্ট ও সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম ওই বক্তব্য তুলে ধরেন।
এসময় এ প্রকল্পের নানান সমস্যা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় কাজের মধ্য দিয়েই যেসব সমস্যাগুলো বেড়িয়ে আসছে, সেগুলো আমরা দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থা নিচ্ছি। চলমান প্রক্রিয়ায় সার্ভার ডাউন বা ওটিপি সমস্যা অনলাইনে আপলোড না করা গেলেও তা লিখিত আকারে নোটে রাখতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। সার্ভার ওপেন হলে সেগুলো আপলোড করে নিতে হবে আর ওটিপিসহ অন্যান্য জটিল সমস্যাগুলো প্রকল্পের কাজের শেষ দিকে তার সমাধান করা হবে।
ইউপি সার্ভার টেকনেশিয়ান মো. মতিউর রহমান বলেন, কাজ শুরু করার পর সার্ভার ডাউন, গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র হারিয়ে ফেলা বা জমাদানে অপারগতা, সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে ওয়ান টাইম পাস ওয়ার্ড (ওটিপি) সমস্যা, একটি মোবাইল নম্বর বা পাস ওয়ার্ডে ৫টি জন্ম এবং মৃত্যুর নিবন্ধন করা যায়। যদি ওই ৫জনের মধ্যে কেউ মারা যান তার মৃত্যু নিবন্ধন করার সুযোগ থাকে না এবং এটার কোন বিকল্পও নেই। তখনই নিবন্ধন জটিলতা দেখা দেয়। এছাড়াও অনেকের মোবাইল নম্বর না থাকায় অন্যের মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করার পর প্রয়োজনের সময় সেই মোবাইল নম্বর বা ওটিপি মনে না থাকার কারনও একটি বড় সমস্যা।
ইউপি সচিব মো. জাফর আহমদ বলেন, আমরা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে মানুষকে সচেতন করায় নানা প্রচারনা চালিয়ে আসছি। এ ক্ষেত্রে মাইকিং, লিফলেটিং, গ্রাম পুলিশ দিয়ে ঘরে ঘরে যেয়ে আহবান করা, ঢোলক দিয়ে বাজারে বাজারে প্রচার করা, জুম্মার খুদবায়, মসজিদের মাইকে প্রচার করাসহ নানাভাবে প্রচারনা চালিয়ে আসছি। তার পরও জন্ম-নিবন্ধনে মানুষের মধ্যে শতভাগ আগ্রহ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না।
ইউপি মেম্বার মো. মমিনুল ইসলাম মুন্না ও তাছলিমা আক্তার জানান, জন্ম নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে অশিক্ষিত ও অসচেতন পরিবারগুলো বেশি পিছিয়ে আছে, এ ইউনিয়নে এক পরিবারে ১২ জন এবং অন্য এক পরিবারের ৬ জন জন্মনিবন্ধন করেননি বা এ সম্পর্কে কোন ধারনাই তাদের নেই। এসব পরিবারগুলোতে মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের (জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন না থাকায়) জন্ম নিবন্ধন না করা, অনেক পরিবার অশিক্ষা, সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি না করার কারনে জন্মনিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় তাদের কাছে জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধনের গুরুত্ব পায়নি।
১০ নং গুনাইঘর (দক্ষিণ) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। ওই কার্যক্রমের আওতায় ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ দেবীদ্বার উপজেলার ১০ নং গুনাইঘর (দক্ষিণ) ইউনিয়ন পরিষদকে ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শুদ্ধ জন্ম- মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রদান ক্যাম্পেইন’র ডিজিটাল পাইলট প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় ৪০হাজার নারী পুরুষের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের টার্গেট হাতে নেয়া হয়। এ টার্গেটে পূর্বে প্রায় ৩০ হাজার জন্ম- মৃত্যু নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়। এছাড়াও প্রবাসে রয়েছে ৩/৪ হাজার অধিবাসী। বাকীদের মধ্যে ২হাজার নতুন নিবন্ধন এবং ৩হাজার ৫শত সংশোধন করা হয়েছে। বাকীগুলো আগামী জুন মসের মধ্যেই শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।