কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় রোপা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন আমন চাষিরা। রোপা আমন ধান রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলার চাষিরা। মাঠে মাঠে চলছে চারা তোলা আর ধান রোপনের কাজ। বীজতলা থেকে চারা তোলা ও মাঠ পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত সবাই। ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করা, ক্ষেত মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করা ও চারা রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন আমন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং ঠিকঠাক মতো কৃষকেরা রোপা আমন ধানের আবাদ করতে পারলে অতিরিক্ত খাদ্য শষ্য উৎপাদন হবে। উপজেলায় এ বছর চলতি আমন মৌসুমে পাঁচ হাজার চারশো উনত্রিশ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বর্তমান সময়ের মতো অব্যহত থাকলে লক্ষ্য মাত্রার অতিরিক্ত জমিতে রোপা আমন ধান লাগানোর সম্ভবনা রয়েছে বলেও জানান উপজেলা কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে আগাছা পরিষ্কার, জমি প্রস্তুত, বীজতলা থেকে ধানের চারা তোলা ও জমিতে চারা রোপণে ব্যস্ত শত শত কৃষি শ্রমিক। কেউ কেউ জৈব সার জমিতে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে রোপা আমন চাষের জন্য তৈরি জমি আল বেধে বৃষ্টির পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। এরইমধ্যে শুকিয়ে থাকা খাল, বিল, জলাশয় ভরে উঠছে বৃষ্টির পানিতে। ফলে খরায় শুকিয়ে যাওয়া ফসলি জমিতেও ফিরে এসেছে আর্দ্রতা। নিচু জমিতে জমেছে বৃষ্টির পানি। আর এই সময়টায় রোপা আমন চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। এখন চাষিদের জমি প্রস্তুত, চাষাবাদ এবং ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটছে। এভাবেই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলি মাঠে নিরলসভাবে কাজ করছেন তারা।
কৃষকরা জানান, শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত কৃষকরা আমন চারা রোপণ করে থাকেন। কিন্তু এ বছর শ্রাবণের শুরুতে বৃষ্টিপাত আশানুরূপ না হওয়ায় মাঠ অনেকটা শুকনো ছিল। তাই পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক কৃষক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ভাদ্র মাসে কিছু পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে চঞ্চলতা দেখা দিয়েছে। প্রতিযোগিতা দিয়ে চলছে জমি প্রস্তুত ও রোপণের কাজ। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমনের ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন চাষিরা।
রোপা আমন ধানের ফলন বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান, আমন মৌসুমে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া, খোলপোড়া, ব্লাস্ট, বাদামি দাগ, খোল পচা, টুংরো, বাকানি এবং লক্ষ্মীরগু (ঋধষংব ঝসধৎঃ) সচরাচর দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ রোগগুলি হল খোলপোড়া, ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া, ব্লাস্ট, টুংরো, বাকানি এবং লক্ষীরগু রোগ। খোলপোড়া রোগ দমনের জন্য পটাশ সার সমান দুই কিস্তিতে ভাগ করে এক ভাগ জমি তৈরির শেষ চাষে এবং অন্য ভাগ শেষ কিস্তি ইউরিয়া সারের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে ভেজা ও শুকনা পদ্ধতিতে সেচ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ধানক্ষেত ৩৫-৪০ দিন পর্যন্ত আগাছামুক্ত রাখতে পারলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ দমন করলে রোপা আমন মৌসুমে শতকরা ১৮ ভাগ ফলন বেশি হতে পারে।
উপজলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া এলাকার আমন চাষি বাহারুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর ৬০ শতকে জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরইমধ্যে ২০ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি ততটা না থাকায় একটু বিপাকে পড়তে হয়েছিল। এখন পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ বছর ধানের চারার কিছুটা সংকট রয়েছে। আশা করছি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে শীঘ্রই বাকি জমিতে চারা কিনে এনে রোপণ করবো।
উপজেলার নাগাইশ গ্রামের আমন চাষি রবিউল, মন্তাজ মিয়া ও শামসু মিয়া জানান, বর্তমানে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাতেই মাঠে আমন ধানের চেহারায় পরিবর্তন আসবে। বৃষ্টি কম হলেও প্রায় প্রতিদিন কিছু বৃষ্টি হওয়াতে আমন ধানের অবস্থা ভালো। যারা এখনও ধানের চারা রোপণ করেনি তাদের জন্যেও চারা রোপণের আবহাওয়া এখন অনুকূলে রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহবুবুল হাসান বলেন, এ উপজেলার কৃষকদের রোপা আমন ধান চাষে আগ্রহ রয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা বর্তমানে পুরোদমে আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া বর্তমানে অনুকূলে রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমরা আশা করছি ঠিকঠাক মতো রোপা আমন আবাদ শেষ হবে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ হবে বলে আশা করছি। প্রান্তিক কৃষকদের পাশে বিভিন্ন পরামর্শসহ যেকোনো সেবায় নিয়োজিত আছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।