বৈষম্য বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে গত ৫আগস্ট কুমিল্লার দেবীদ্বারে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত সাব্বির হোসেন (১৭) দীর্ঘ ৪০ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে অবশেষে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে। সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের আহাজারি যেন থামছেই না, ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার আকাশ বাতাস। বাবা হারা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সাব্বির। সে দেবীদ্বার পৌর এলাকার ভিংলাবাড়ি গ্রামের মৃত: আলমগীর মিয়ার পুত্র।
নিহত সাব্বির মরিচাকান্দা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, পরে তার বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে সিএনজি চালিয়ে সংসার চালাতেন বলে স্থানীয়রা জানায়।
সাব্বিরের মামা নাজমুল হাসান বলেন, বৈষম্য বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সকাল ১০টায় দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে পৌঁছলেই স্বৈরাচার আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আতর্কৃত গুলি ছুঁড়তে থাকে। এসময় সাব্বিরের মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে গেলে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। তার মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ওইদিন রাতেই তাকে ঢাকা ‘গ্রীণ লাইফ হসপিটালে’ নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। ডাক্তার দেখিয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে বাড়িতে আনা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলে দ্রুত দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমার ভাগিনাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমি প্রশাসনের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। তবে স্থানীয় অনেকেই জানায়, ৫আগস্ট দুপুরের পর ছাত্রজনতা দেবীদ্বার থানা ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ গুলি ছুঁড়তে থাকলে সাব্বির সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।
নিহতের মা’ রীনা বেগম পুত্র শোকে বার বার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন। শুধু বলছেন তোমরা আমার সাব্বির মানিককে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। ও মানিক তুই কেন একবার আমার কাছে বলে গেলি না। গত দু’বছর পূর্বে সাব্বির বাবা হারিয়ে মা’ ও দুই ভাই বোন সিয়াম(১১) ও সামিয়া(৬)সহ ৪ সদস্যের পরিবারের ভরনপোষনে সিএনজি চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন। তার মৃত্যুতে পুরো পরিবারটি এখন অন্ধকারে। শনিবার বাদ আসর ভিংলাবাড়ি ঈদগাহ ময়দানে সাব্বিরের জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
এ বিষয়ে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, নিহতরে মরদেহ ছোরতহাল তৈরী পূর্বক ময়না তদন্তের জন্য লাশ নিতে চাইলে স্থানীয়রা লাশ দিতে চাচ্ছেনা।
এ ব্যপারে সার্কেল এসপি শাহ মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান বলেন, নিহতরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য ওসি তদন্ত শাহিনকে পাঠিয়েছিলাম, নিহতের ছোরতহাল রিপোর্ট তৈরী করলেও স্থানীয়রা ময়না তদন্তের জন্য লাশ দেয়নি উল্টো লাঠিসোটা নিয়ে এলাকার লোকজন ক্ষীপ্ত হয়ে তেড়ে আসে।