দেবীদ্বারে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ড ও তিন তলা ভবনের দেওয়াল ভেঙে ভবনটি হেলে যায় এবং পার্শ্ববর্তী ৩টি ভবনের দরজা-জানালা এবং জানালার গ্লাস ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বিস্ফোরিত বাসায় লোকজন না থাকায় বড় ধরনের কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাত আনুমানিক ৯টায় দেবীদ্বার পৌরসদরের শান্তিরোড এলাকার ‘সরকার ভিলায়’।
স্থানীয়রা জানান, রাতে বিকট শব্দে হঠাৎ বিস্ফোরণে তিন তলাবিশিষ্ট ‘সরকার ভীলা’র নিচ তলার দুইটি ফ্ল্যাটের মাঝখানের একটি দেয়াল ধ্বসে পড়ে এবং দরজা-জানালা, জানালার গ্লাস ভেঙে উড়ে যায়। এসময় ভবনে আগুন ধরে যায়। পাশের ৩টি ভবনের দরজা-জানালা, জানালার গ্লাস ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ছিটকে পড়ে।
বিস্ফোরণের বিকট শব্দকে স্থানীয়রা ভূকম্পন এবং বজ্রপাত মনে করে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে দুজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিস্ফোরিত বাসার লোকজন ঈদে বাড়িতে চলে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। মুরাদনগর ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এবিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া দুবাই প্রবাসী কাজী কুদ্দুস মিয়ার স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার জানান, ঈদের ছুটিতে দু’দিন পূর্বে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি ওয়াহেদপুর ঈদ করতে চলে যাই। মঙ্গলবার রাতে বাড়ির মালিক এ দুর্ঘটনার সংবাদ দিলে দ্রুত এসে দেখি আমার বাসার সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে তিনি আরো বলেন, আমি গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করি না, পাইপ গ্যাস ব্যবহার করি। আমার রান্না ঘরের লোহার গ্যাসের চুলাটিও নাই। গ্যাসের চুলায় বিস্ফোরণ হলে রান্না ঘরের দেয়াল, জানালার রডগুলো অক্ষত ছিল, চুলাটি ছিটকে বেড়িয়ে গেলে দেয়াল বা জানালা ভেঙে যাওয়ার কথা। কিন্তু লোহার চুলার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি।
ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচতলার পার্শ্ববর্তী ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া স্কুল শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, বিকেলে ঝড় ও প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হয়েছিল, যার কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। রাতে খাবার খেয়ে বিশ্রামে যাই, রাত আনুমানিক সোয়া ৯টায় বিদ্যুৎ আসার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, প্রথমে ভেবেছিলাম বজ্রপাতের ঘটনা, পরে দেখি আগুনের পোড়া গন্ধ, দ্রুত রোম থেকে বেড়িয়ে এসে স্থানীয়দের সঙ্গে আগুন নিভানোর চেষ্টা করি।
পার্শ্ববর্তী অপর ভবনের ভাড়াটিয়া প্রকৌশলী বাহাউদ্দিন জানান, বিষ্ফোরণের বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। ভূমিকম্প মনে করে দ্রুত নিচে নেমে এসে দেখি ভবনের পাশে লাগানো বৈদ্যুতিক মিটারগুলোতে আগুন এবং ওপর থেকে বৃষ্টির ন্যায় গ্লাস ভাঙা পড়ছে। পাশের বিল্ডিংয়ে আগুন জ্বলছিল। প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভাড়াটিয়া বাসায় না থাকায় হতাহত থেকে তারা বেঁচে যায়। এ সময় তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে পাশের ভবনের আব্দুল আলীম ও ফাতেমা বেগম নামে দুজন আহত হন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অঞ্জন কুমার নাহা জানান, কি কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে তা বলা যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিসের লোকজনই ভালো বলতে পারবে।
মুরাদনগর ফায়ার সার্ভিসের অয়ার হাউজ ইন্সপেক্টর মোঃ আমজাদ হোসেন জানান, বিষ্ফোরণের সংবাদ পেয়ে আমাদের টিম গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রথমে আমরা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবর পাই কিন্তু পরে শুনি তারা লাইনের গ্যাস ব্যাবহার করেন, গ্যাস বিস্ফোরণের কোন আলামত আমরাও খুঁজে পাইনি। বাসায় মাত্রাতিরিক্ত সময় ধরে কোনো বৈদ্যুতিক ডিভাইস চালু থাকায় অতিরিক্ত হিট হয়ে শর্টসার্কিট থেকে এ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে বলে আমাদের ধারণা।