কুমিল্লার দেবীদ্বারে কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আবুল হাসেম(৪৫) নামে এক অটোচালক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ আত্বহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে মুরাদনগর অঞ্চল দেবীদ্বার উদ্দীপন শাখার ম্যানেজার আবু হেনাকে দায়ী করছেন নিহতের পরিবার।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (২১ মে) ভোর ৫টায় উপজেলার ১০ নং গুনাইঘর (দঃ) ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের আমিন বাড়ির সামনের তেঁতুল গাছের ডালে রশিতে ঝুলে। পরে সংবাদ পেয়ে সকাল ১০টায় লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেছে দেবীদ্বার থানা পুলিশ। নিহত আবুল হাসেম বল্লভপুর গ্রামের আমিন বাড়ির মৃত: আজগর আলীর ছেলে। সে পেশায় একজন ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালক ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, আবুল হাসেম কর্তৃক ৬টি বেসরকারী এনজিও (ব্যাংক) থেকে আনা কিস্তির পরিমান সুদে- আসলে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা ছিল। এগুলোর মধ্যে বেসরকারী (এনজিও) সংস্থা ‘উদ্দীপন’ থেকে ৪ লক্ষ টাকা ঋণের বিপরীতে মাসিক কিস্তি ছিল ২৬ হাজার ৮শত টাকা, ব্র্যাক ব্যংক এর ধামতী প্রগতী শাখা থেকে নেয়া ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মাসিক কিস্তি ছিল প্রায় ৯ হাজার টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক বারেরা প্রগতী শাখা থেকে নেয়া ১ লক্ষ টাকার বিপরীতে মাসিক কিস্তি ছিল প্রায় ১০ হাজার টাকা, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নেয়া ১ লক্ষ টাকার বিপরীতে সাপ্তাহিক কিস্তি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা। আবুল হাসেম তার স্ত্রী, ৩ পুত্র ও ২ কণ্যা সন্তানের ভরন পোষণ শেষে কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংকের লোকজন প্রতিনীয়ত কিস্তির টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিস্তির লোকজন তার বাড়িতে এসে দিনভর থেকে শুধু থাকা-খাওয়াই নয়, ঘুমিয়েও সময় কাটান। অবশেষে আবুল হাসেম নিরুপায় হয়ে স্বপরিবারে গৃহত্যাগ করেন। প্রায় এক মাস পালিয়ে থাকার পর পাড়া প্রতিবেশীরা এনজিও/ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে কিস্তির পরিমান কমিয়ে পরিশোধ করা এবং গ্রামবাসী তাকে আর্থিকভাবে সহযোগীতা করার আশ্বাস দিলে আবুল হাসেম গত শনিবার (১৮ মে) বাড়ি আসেন।
২০ লক্ষাধিক টাকা ঋণ এর বিষয়ে তার ছোট ভাই জাকির হোসেন জানান, ভাই অটো চালাতে যেয়ে দু’বার এক্সিডেন্ট করেছেন, পাজরের ৩টি হাড় ভেঙ্গেছেন, মাথায় আঘাত পেয়েছেন, হাত দু’বার ভেঙ্গেছে, দু’টি অটো রিক্সা চুরি হয়েছে, মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন, একটুকরো জমি কিনে বাড়ি করেছেন, সে বাড়ির নতুন ঘর করার কিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করলেন। ঋণ বাড়ার কারন হিসেবে তিনি আরো বলেন, একটি ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করতে আর একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। বর্তমানে ঋণের মূল টাকার পরিমান প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা হলেও বকেয়া কিস্তি, সুদে আসলে এবং প্রতিবেশী ও স্বজনদের ধারে নেয়া মোট ঋণের পরিমান প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা হবে।
মৃত আবুল হাসেম এর মেয়ে হাসনা আক্তার অভিযোগ করে জানান, আমার বাবাকে কিস্তির ম্যানেজার আবু হেনা বলেন, “আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন মরে যান। তাহলে আপনাদের কিস্তি মাফ করা হবে। এমনকি আপনাদেরকে আমাদের অফিস থেকে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে”।
এদিকে উদ্দীপন মুরাদনগর অঞ্চল দেবীদ্বার শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আবু হেনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা শুধু মাত্র কিস্তির টাকা কবে, কখন পরিশোধ করবে তা জানার জন্য সালমা বেগম এর নমিনিসহ ৫/৬জনকে নিয়ে তার বাড়িতে যাই এবং পরবর্তি কিস্তির সময় জেনে সেখান থেকে চলে আসি। তিনি আরো জানান, আবুল হাসেমের স্ত্রী সালমা বেগম পূর্বেও ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন, ওই টাকা পরিশোধের পর চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবারো ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নেন, যার নমিনি আবুল হাসেম। এ ৪ লক্ষ টাকার সূদসহ দেড় বছরে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৮ শত টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও ২ কিস্তি ২৬ হাজার ৮শত করে মোট ৫৩ হাজার ৬ শত টাকা পরিশোধ করেন। এদিকে কিস্তি বকেয়া ফেলে স্বপরিবারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে বাড়িতে আসার পর সোমবার (২০ মে) বিকেল ৫টায় তার বাড়িতে যেয়ে কিস্তি পরিশোধের তাগাদা দিয়ে আসি।
এ বিষয়ে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নয়ন মিয়া জানান, ঋণের দায় থেকে মুক্তিপেতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন আবুল হাসেম নামে এক অটো চালক। নিহতের মরদেহ উদ্ধার পূর্বক ময়নাতদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। এবিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।