কুমিল্লার দেবীদ্বারে স্বর্ণালি আক্তার(২১) নামে এক যুবতী মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। স্বর্ণালীর মা হালিমা বেগম প্রতিবেশী সুলতান মিয়ার নিকট পাওনা টাকা চাইলে সুলতান হালিমা বেগমের মেয়ে স্বর্ণালি আক্তারকে বাসায় ডেকে গোপন ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিলে ওই যুবতী নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার ভূষনা গ্রামে। স্বর্ণালী আক্তার উপজেলার থামতী চৌধুরী বাড়ির প্রবাসী জহিরুল ইসলামের স্ত্রী।
বুধবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ ভূষনা পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯ টায় উপজেলার ভূষনা ছাড়া বাড়িতে। ঘটনার সংবাদে বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় দেবীদ্বার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তরুণীর লাশ উদ্ধার করেন। নিহত যুবতী স্বর্ণালী আক্তার(২১) ভোষনার হালিমা বেগমের মেয়ে।
ঘটনার বিষয়ে নিহতের মা হালিমা বেগম জানান, ভোষনা গ্রামের মৃতঃ সুন্দর আলীর ছেলে সুলতান মিয়া কিছুদিন পূর্বে তার মেয়ে স্বর্ণালী আক্তারকে বিভিন্ন যায়গায় নিয়ে গিয়ে গোপন ভিডিও তৈরি করে। স্বর্ণালীর মা হালিমা বেগমের সাথে টাকা লেনদেন ও সুদি ব্যাবসা রয়েছে সুলতানের সাথে। স্বর্ণালীর মা হালিমা বেগম তার টাকা ফেরত চাওয়ায় স্বর্ণালী আক্তারকে বাসায় ডেকে নিয়ে তার গোপন ভিডিও প্রবাসী স্বামীর কাছে প্রকাশ করে দিবে বলে হুমকি দিলে ভয়ে আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছে স্বর্ণালী আক্তার।
তিনি আরো জানান, সুলতান মিয়ার কাছে তিনি ৫ লক্ষ টাকা পাওনা। এছাড়া তার সাথে সুদি লেনদেনের কারবার ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি তার পাওনা টাকা চাইলে সুলতানের সাথে মত বিরোধ দেখা দেয়। সুলতান তার প্রথম সংসারের দুই মেয়ে হাবিবা ও স্বর্ণালী’কে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। তার মা হালিমা বেগম না-কি পুরো সম্পত্তি ও টাকা পয়সা দ্বিতীয় স্বামী, সন্তানের নামে লিখে দিচ্ছেন বলে ক্ষেপিয়ে তোলেন। তার ছোট মেয়ে স্বর্নালীকে নিজ স্বামীর বাড়ি ধামতী থেকে মায়ের সম্পত্তির লোভ ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে এসে নারায়ণগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্হানে ভাড়া বাসায় ১০-১৫ দিন রাখার পর, বড় মেয়ে হাবিবার প্রবাসী জামাই কাউছারকে হাত করে শ্বাশুড়ির সম্পদের লোভ দেখিয়ে হালিমা বেগমের বড় মেয়ে হাবিবা সহ ছোট মেয়ে স্বর্নালীকে চট্টগ্রামের অলংকারে এক ভাড়া বাসায় রাখেন।
হালিমা বেগম একসাথে দুই মেয়ের খোঁজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এক সপ্তাহ পর স্বর্ণালী তার মাকে ফোন দিয়ে বলেন, তারা দুই বোন চট্টগ্রামের অলংকারে আছেন। হালিমা বেগম সুলতানকে চাপ প্রয়োগ করলে, (গত ২ আগষ্ট) বুধবার সুলতান সহ গিয়ে তিনি তার দুই মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। পরবর্তিতে গত (৫ আগষ্ট) শনিবার রাতে স্হানীয় মাতাব্বর আবুল কালাম ও সোলেমানের উপস্থিতিতে ঘরোয়া শালিসে সুলতানের দেয়া মেয়েদের প্রলোভন ও আত্নগোপনে রাখার বিষয়টি সমাধান হয়। সালিশের একদিন পর সুলতান তার ছোট মেয়ে স্বর্ণালীকে ফোন করে ডেকে নিয়ে তার গোপন ভিডিও প্রবাসী স্বামীর কাছে প্রকাশ করে দিবে বলে ভয় দেখালে আত্মসম্মানের ভয়ে মঙ্গলবার(৮আগষ্ট) রাত সাড়ে ৯টায় টায় নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে।
নিহতের বড় বোন হাবিবা জানান, সুলতান আমার প্রবাসী স্বামীকেও লোভ দেখায় আমার মায়ের টাকা ও সম্পদের। আমি যদি মায়ের কাছ থেকে টাকা ও সম্পদ না এনে দেই আমাকে নিয়ে সংসার করবে না বলে জানায় আমার স্বামী। পরে আমি বাধ্য হয়ে সুলতান মিয়ার কথায় ছোট বোন স্বর্নালীর সাথে চট্টগ্রামে ভাড়া বাসায় যাই। পরে ভুল বুঝতে পেরে মায়ের কাছে ফিরে এসেছি।
তবে এর আগে লম্পট সুলতান আমার ছোট বোন স্বর্ণালীকে গোপনে কিছু খারাপ ভিডিও ধারণ করেছে বলে আমরা ধারণা করছি। যে কল রেকর্ড ও গোপন ভিডিও ফুটেজ প্রবাসী স্বামীর কাছে প্রকাশের হুমকি দিয়েছে। আত্মসম্মানের ভয়ে আমার বোন আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। আমার বোনের মৃত্যুর জন্য সুলতান মিয়া দায়ী।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুলতান মিয়ার সাথে কথা বলতে তার বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ফোনের সুইচ বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি এলাকায় নেই বলেও জানা গেছে।
এ বিষয় দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।