আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দলের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন ৭ জন প্রার্থী।
সবাই তাদের নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে হরতাল-অবরোধ বিরোধী মিছিল ও শান্তি সমাবেশ, উঠোন বৈঠক এবং সভা সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছেন। যার যার অবস্থান থেকে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে লভিং-তৎবিরেও ব্যস্ত রয়েছেন।
আওয়ামীলীগের ৭ মনোনয়ন প্রত্যাশিরা হলেন কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, আওয়ামীলীগ কুমিল্লা (উঃ) জেলার সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব রোশন আলী মাষ্টার, আওয়ামীলীগ কুমিল্লা (উঃ) জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামীলীগ কুমিল্লা (উঃ) জেলা সহ-সভাপতি শেখ আব্দুল আউয়াল, বিশ্বব্যাংকের কৃষি ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার মোস্তফা, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ ইন্ক’র সভাপতি ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার, মহিলা শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুরাইয়া আক্তার। প্রার্থীরা তাদের দলীয় কর্মকান্ডে ত্যাগের প্রতিশ্রুতি হিসেবে প্রত্যেকেই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। দলীয় মনোনয়ন পেতে সব নেতারাই এখন কেন্দ্রমূখী।
বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল তার বাবা সাবেক উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এএফএম ফখরুল ইসলাম মূন্সীর হাত ধরেই ২০০৯ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ওই সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজুকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পূর্বের ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত রেখে জনগনের ভোটে আগামী নির্বাচনেও বিজয় প্রত্যাশি। তবে সম্প্রতি দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ এর সাথে বিরোধ, জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে মারধরসহ নানা ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে।
আলহাজ্ব রোশন আলী মাষ্টার পারিবারিক সূত্রে আওয়ামী পরিবারের সদস্য। ২০০৪ সালে সাবেক উপমন্ত্রী ও এমপি এএফএম ফখরুল ইসলাম মূন্সীর সাথে দেবীদ্বারে গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙ্গা বন্যার্তদের ত্রাণ দিতে এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রোষানলে হামলার স্বীকার হন। এর পর থেকে তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে এখনো রাজ পথে আছেন। বিগত ওয়ান-১১ এর সময় সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন এবং ওই সময় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে চাপ সৃষ্টি করে এবং কঠোর নির্যাতন সহ্য করেও মামলা করেননি। তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী নির্বাচিত হন। ওই সালে বিভিন্ন কারনে তার মনোনয়নটি ছিনিয়ে নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে আসা সাবেক মন্ত্রী এবিএম গোলাম মোস্তফাকে দিলে তিনি বিপুল ভোটে নৌকা প্রতীকের বিজয় উপহার দেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবার সংসদ নির্বাচনে তিনি তার অতিত কর্মের সাফল্য হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশি।
তরুণ উদিয়মান নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ি আবুল কালাম আজাদ। তিনি ২০২০সালে কুমিল্লা (উঃ) জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। সাংসদের একচ্ছত্র আধিপত্তে তিনি বাঁধ সাঁধেন। সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরোধ সংঘাত, হামলা, মামলার ঘটনায় তিনি দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন। এছাড়াও তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়ারম্যান পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করেন।
শেখ আব্দুল আউয়াল। দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ আব্দুল মান্নানের পুত্র। পারিবারিক সূত্রে আওয়ামী পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে ছাত্রজীবন থেকেইে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামীলীগের একজন নিবেদীত কর্মী হিসেবে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে আওয়ামীলীগ কুমিল্লা (উঃ) জেলার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. ইফতেখার মোস্তফা। তিনি সাবেক মন্ত্রী, এমপি, প্যানাল স্পিকার ও সচিব এবং কুমিল্লা (উঃ) জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি এবিএম গোলাম মোস্তফার একমাত্র পুত্র। ড. ইফতেখার মোস্তফা পাকিস্তান আমলের প্রভাবশালী শিক্ষামন্ত্রী মৌলভী মফিজ উদ্দিন সাহেবের দৌহিত্র। তবে এ নেতা রাজনৈতিক অঙ্গনে খুব বেশী আলোচিত না হলেও সর্বমহলে একজন ভদ্র, বিনয়ী, সৎ ও কর্মঠ ব্যক্তি হিসেবে সমাদৃত। বর্তমানে তিনি বিশ্বব্যাংকের কৃষি ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।
ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার, তিনি আমেরিকা প্রবাসী। দেবীদ্বারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দরিদ্র মানুষের কল্যানে বাবা-মায়ের নামে একটি ফাউন্ডেশন ও একটি টেকনিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি করোনার প্রাদুর্ভাব থেকেই দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। শেখ রাসেল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিনামূল্যে শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষা সামগ্রী, বৃত্তি প্রদান, স্বাস্থ্য সেবায় চিকিৎসা-ঔষধ বিতরণ, গৃহহীনদের গৃহদান, কর্মহীনদের কর্ম সংস্থান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুব-তরুণদের উৎসাহীত করাসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ডে মানবিক ডাক্তার পরিচয়ে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। তিনি শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ ইন্ক’র সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করছেন।
সুরাইয়া আক্তার। তিনি পরিকল্পনা বিভাগে চাকুরি করাকালে পরিবার পরিকল্পনা কল্যান সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। তিনি বর্তমানে মহিলা শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।