কুমিল্লার হোমনায় জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তবৃন্দ, সুধীজন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বল্যবিয়েরোধ সম্পর্কে বলেন, বাল্যবিয়েকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। দেশের যেখান থেকেই জন্মনিবন্ধন করে নিয়ে আসুক না কেন, কাজী সাহেবরা যদি যাচাই বাছাই করেন তাহলেই সম্ভব এক রোধ করা। কোনো অযুহাতেই বাল্যবিয়ের দিকে ধাবিত করা যাবে না। এফিডেভিটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে এফিডেভিট একেবারেই ভিত্তিহীন জিনিস। একজন ল’ইয়ার একটি কাগজে একটা কিছু লিখে দিল তাতে কী এসে যায়, এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর আইনগত ন্যূনতম কোনো ভিত্তি নেই। বাংলাদেশের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটগণ এ কাজ করেন না। যেটা হয়, উকিলের কাছে গিয়ে একটি এফিডেভিট করে নিয়ে আসেন; একটি নোটারি পাবলিক করে নিয়ে আসেন। কোর্ট ম্যারিজ বলে কোনো ম্যারিজ নেই। আজ রবিবার বিকেলে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক সবাইকে ভালো থাকা এবং ভালো রাখার উদাহরণ দিয়ে বলেন, মানুষের কথা শুনতে হবে, মানুষের সমস্যা সমাধান করতে হবে। পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে। আমরা সবাই যদি পজেটিভ হই তাহলে হোমনাটাও ভালো থাকবে। আমরা সবাই যদি এক জন আরেক জনের প্রতি একটু সহানভূতিশীণ হই, সহকর্মী হয়ে পাশে দাঁড়াই এবং আমাদের সরকারি কর্মকর্তারাও যদি একটু সহমর্মীতা দেখাই তাহলে সবাই ভালো থাকবে। সবাই যদি পজেটিভ হই তাহলে হোমনাটাও ভালো থাকবে। আমি আশা করব, সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ যারা আছেন; আমরা সবাই মানুষের প্রতি সব সময় সহনুভূতিশীল হয়ে যে কোনো বিষয় আমরা শুনে সমাধান করব।
তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, চেয়ারম্যান, মেম্বারগণ যারা আছেন তারা দিন নেই, রাত নেই সব সময় মানুষকে নিয়েই থাকেন। মানুষের সমস্যা তাদের সারাদিন শুনতে হয় এবং সমাধনও করেন। আমরা যারা সরকারী কর্মকর্তা আছি আমাদেরও তাদের সঙ্গে মেলন্ধন, সেঁতুবন্ধন রাখতে হবে। কারণ জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সুশীল সবাইকে নিয়েই এ সমাজ। সবাইকে নিয়ে যদি একই কাতারে আসতে না পারি তাহলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পেঁৗছতে পারব না।
মুক্তিযোদ্ধাদের যাতায়াতে নানা সমস্যার কথা শুনে ডিসি বলেন, বিআরটিসি বাসে চড়তে গিয়ে আপনাদের কার্ড প্রদর্শন করবেন। এরপরও যদি কেউ আপনাদের হয়রানি করে ইউএনওকে জানাবেন, আমাকে জানাবেন, আমরা এর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। বাংলাদেশ তো এখন আর আগের জয়গায় নেই। আমরা কেন সেই পুরাতন চিন্তাধারা নিয়ে থাকব। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবোর্চ্চ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। আমরাও চাই আপনারা সেই সম্মানের সহিত থাকেন। আপনাদের কারণেই আমরা এই দেশটাকে পেয়েছিলাম। আপনাদের কারণেই আজ আমরা এখানে বসতে পেরেছি। যে কোনো বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সবার আগে অগ্রাধিকার পাবে। নির্বাচন অফিসের অচলাবস্থা নিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
প্রবাসীদের সম্পর্কে জেলা প্রশাসক বলেন, আজ বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতি কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে তাদের ওপরে। এই রেমিটেন্সযোদ্ধাদের ওপরে। রেমিটেন্সযোদ্ধাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী রেমিটেন্স আসে কুমিল্লা থেকে। আর কুমিল্লার মধ্যে সবচেয়ে বেশী আসে হোমনা থেকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমার সভাপতিত্বে ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইউছুফ হাসানের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেহানা বেগম, পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মহাসীন সরকার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমা আক্তার রীনা, ওসি মো. জয়নাল আবেদীন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন খন্দকার, মুক্তিযোদ্ধা মো. হুমায়ুন কবীরসহ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের নেতৃবন্দ প্রমুখ।
শেষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী, কিশোর কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থীদের মাঝে কারাতে প্রশিক্ষণের পোশাক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অনুদানের চেক বিতরণ করেন।