বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে তীব্র তাপপ্রবাহে উপজেলা ও ইউনিয়ন গুলোতে এ বছর বোরো ধানের সোনালী আভা ছড়িয়েছে। যে দিকে চোখ যায় দিগন্ত জুড়েই সবুজ ধানখেত যে সোনার রঙে রঙ্গিন হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে সকলের ছুটি থাকলেও কৃষকদের কোনো ছুটি নেই, একটার পর একটা কৃষিকাজ লেগেই থাকে। আর সেই কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। আমন ধান কাটার পরে শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন কৃষি আবাদ। শাক-সবজি, গম, ভুট্টাসহ নানা ধরনের চাষাবাদ শেষ হতে না হতেই আবার শুরু হয়ে যায় বোরো ধান কাটার সময়।
এদিকে সকালের প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে সন্ধ্যা অবধি বোরোর জমিতে ধান কাটা ও ধান ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
কেউ কেউ ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে নিজের পরিবারের লোকজন দিয়ে প্রচন্ড গরমে ধান কাটতে দেখা যাচ্ছে।
ধান কাটা ও ধান ছড়ানো প্রতিটি কাজ ঠিকমতো করলেও মনে শান্তি নেই কৃষকদের। সবার মনেই রয়েছে হতাশা।
ধানের ন্যায্য দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে। ব্রাহ্মনপাড়া
উপজেলার সাহেবাবাদ গ্রামের কৃষক আবদুল রহমান বলেন, কিছুদিন ধরে প্রচন্ড গরমে আমরা জমিতে ধানকাটা ও মাঠ থেকে ধান ছড়ানো বিগ্ন ঘটছে। একটু গরম কম থাকলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমাদের কষ্ট কম হত। এবং শ্রমিক ও ঠিকমতো পাওয়া যেত। এ ছাড়াও ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়া গেলে লোকসান গুনতে হবে আমাদের। তাই ধান চাষাবাদ করে আমরা সব সময় হতাশার মধ্যেই থাকি। আবার মাঝেমধ্যে আশায় বুকও বাঁধি, না জানি কখন ধানের দাম বেড়ে যায়। তিনি আরো বলেন এ বছর নতুন জাতের হাইব্রিড জাতের ধান ১৪৭ শতক জায়গায় বরো রোপণ করতেছি, ধাব ভাল হয়েছে।দু একদিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা চান্দলা ইউনিয়নের বড়ধুশিয়া গ্রামের কৃষক শেরেআলী বলেন প্রখর রোদ তীব্র তাপপ্রবাহ মধ্যে ও কৃষকরা থেমে নেই বোরো ধান লাগাতে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়। এছাড়া বোরো আবাদে খরচও বেশি হয়। বোরো ধান লাগানোর পর থেকে তিন-চার দিন পর পর সেচ দিতে হয়। এখন ধান কাটা ও তারপরও যদি ন্যায্য দাম না পাই তবে লোকসানের মুখে পড়তে হবে আমাদের। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন বোরো আবাদে যেন আমাদের ভর্তুকি দেওয়া হয়।
উপজেলার টাটেরা গ্রামের কৃষক ফিরোজ মিয়াবলেন, এ বারের প্রচণ্ড গরমে জমিতে কোন ধরনের শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিক না পেলে বোরোধান কাটা ও ধান ছড়ানো জন্যে কিছুটা ক্ষতি হবে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ( ডিডি) আইয়ুব মাহমুদ গতকাল এই প্রতিনিধিকে বলেন, এ বছর কুমিল্লায় বোরো ধানের লক্ষমাত্র ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৬০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার অনেক জায়গায় ধানের কাটা শুরু হয়েছে। প্রখর রোদে তীব্র তাপদহন সামান্য কষ্ট হচ্ছে কৃষকের। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। এ বছর আধুনিক জাতের মধ্যে বি ধান ৮৪, ৮১,৮৮,৮৯,৯২, এবং বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ ও ১০২ জমিতে রোপণ হয়েছে। আশা করি এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কুমিল্লায় বেশি অর্জিত হবে। এছাড়া আগাম হাইব্রিড জাতের ধান আমাদের ৩/৪ পারশেন জমিতে ধান কাটা ও ধান ছড়ানো হয়েছে। আশা করি অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমাদের কাঙ্খিত বোরো সোনালী ধান কৃষক ঘরে তুলতে পারবে।