কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও সে পানি খাল দিয়ে ঠিকমতো নিষ্কাশন হতে না পারায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আকস্মিক বন্যা হয়েছে। পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ। উপজেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি প্রবেশ করায় চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। কাঁকড়ি নদীতে মাটি কাটায় পাড় ধসের শঙ্কাও রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে অবস্থিত খাল ও নদীতে কিছু ব্যক্তি জাল ও বাঁশ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে রেখেছে। ফলে গত দুই দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানির চাপে বিভিন্ন গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এতে করে সুপেয় পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাতভর বৃষ্টিতে উপজেলার অধিকাংশ মাছের প্রজেক্ট, দীঘি ও পুকুর ভেসে গিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ চলে গেছে। বন্যার পানি উপজেলা পরিষদে এলাকায় ঢুকে করায় নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি হাসপাতালে প্রবেশ করায় জরুরি ও বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। হাসপাতালে রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় করা হলেও বুক সমান পানি থাকায় রোগীরা বাড়িঘরে ফিরতে পারছে না।
রিমি পোলট্রি ফার্মের মালিক মিজানুর রহমান টিটু বলেন, ‘বন্যার পানি আমার দু’টি পোলট্রি ফার্মে প্রবেশ করায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা মূল্যের লেয়ার মুরগি মারা গেছে।’
কে এম ফিশারিজের মালিক মো. খোরশেদ আলম বলেন, আকস্মিক বন্যায় দু’টি দীঘিও তিনটি পুকুরে অতিরিক্ত পানি এলে ভেসে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে।
গুণবতী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল বলেন, বন্যায় গুণবতী ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টদের বিচার চেয়ে কলাবাগান এলাকার রনি বলেন, ‘কাঁকড়ি নদীর মাটি বিক্রি করছে একটি চক্র। তাদের কারণে হুমকির মুখে কাঁকড়ি নদীর পাড় সহ এসব এলাকার সাধারণ মানুষ। নদী ভাঙলে বন্যায় ভেসে যাবে আমাদের বাড়িঘর।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো: গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, ‘আকস্মিক বন্যায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুক সমান পানি প্রবেশ করেছে। জরুরি ও বহির্বিভাগে পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রয়েছে। এক্স-রে ও ইপিআই টিকা রুমেও পানি প্রবেশ করেছে। হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টারগুলোতে পানি প্রবেশ করায় চিকিৎসকরা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। যার কারণে হাসপাতালের কিছু রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানির কারণে সমগ্র উপজেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা পরিষদ এলাকায় পানি প্রবেশ করায় নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে। পৌর এলাকায় পানি নিষ্কাশন করতে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠে কাজ করছেন। তবে ঠিক কত হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।