কোটা আন্দোলন বা কোনো প্রকার সংঘাতে না জড়িয়েও চট্টগ্রামে গুলিতে নিহত ওয়ার্কসপ মিস্ত্রি ফারুকের মরদেহ পুলিশি পাহারায় শ্বশুর বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনায় দাফন করা হয়েছে। একজন ওয়ার্কসপ শ্রমিকের এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে বাকরূদ্ধ পরিবারের সদস্যরা। তার এই হত্যার দায় কে নেবে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল ৮টায় চান্দিনা থানা পুলিশের উপস্থিতিতে অনেকটা দ্রুততার সঙ্গে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। এর আগে রাত আড়াইটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের পর পুলিশি পাহারায় মরদেহ নিয়ে চান্দিনার উদ্দেশে রওয়ানা করেন পরিবারের সদস্যরা। চট্টগ্রাম থেকে চান্দিনা পর্যন্ত পুলিশি পাহারায় মরদেহ বাড়ি পৌঁছে সকাল সাড়ে ৬টায়। বাড়িতে খবর পৌঁছানোর পর পূর্বেই কবর প্রস্তুত করে রাখায় সকাল ৮টার মধ্যে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয় নিহত শ্রমিক ফারুকের।
নিহত ফারুক হোসেনের পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। তার বাবার নাম দুলাল মিয়া। কর্মের তাগিদে চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ২০০৭ সালে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাতাঘাসী ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামের সহিদুল ইসলামের মেয়েকে বিয়ে করেন একই ইউনিয়নের সব্দলপুর গ্রামে জায়গা কিনে নিজের ঠিকানা করেন চান্দিনায়। যেহেতু চট্টগ্রামে কাজ করেন সেহেতু স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামের ভাড়া বাসায়ই বসবাস করতেন তিনি।
নিহতের শ্যালক চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র সাইফুল ইসলাম জানান, ফারুক হোসেন যে দোকানে কাজ করতেন ওই দোকানের কাছেই আন্দোলন চলছিল। তিনি রাস্তা অতিক্রম করে একটি হোটেলে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়। তার বুকে ও পিঠে দুইটি গুলি লাগে। স্থানীয় লোকজন তাকে চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আমরা খবর পাই এবং সেখানে গিয়ে তার নিথর দেহে দেখতে পাই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফারুক ভাই তো কোনো আন্দোলন করেনি, তিনি তো কারও সঙ্গে একাত্মতাও করে সংঘাতে জড়ায়নি। আমার ভাগিনা (ফারুক এর ছেলে) সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে এবং ভাগ্নিটার বয়স মাত্র ৬। এই শিশুগুলোকে নিয়ে আমার বোনটা কী করবে?
নিহত ফারুক হোসেনের স্ত্রী সীমা আক্তার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমার পরিবারে স্বামী ছাড়া আর কেউ নেই। আমার স্বামী তো কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে যায়নি? আমার স্বামী তো রাস্তা বন্ধ করেনি। বন্ধ রাস্তা পার হতে যাওয়াই তার অপরাধ ছিল? আমার স্বামীকে কেন এভাবে হত্যা করল?
বাতাঘাসী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম জানান, নিহত ফারুক খেটে খাওয়া মানুষ। আন্দোলন বা রাজনীতি কোনোটাইতেই নেই। কোটা আন্দোলন সফল বা বিফল কিছুতেই তার যায় আসে না। তার মতো শ্রমিকের এমন নির্মম মৃত্যুর দায় কে নিবে? মাথার ওপর থেকে ছাতা উড়ে যাওয়া এই পরিবারের দায়িত্বই বা কে নেবে? নাবালক দুই সন্তান বাবা হারানোর যে বেদনা এখনও তারা বুঝতে শিখেনি। তাদের মাথায় কে-ই বা হাত বুলাবে? তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, সকল আন্দোলনে ফারুকরাই বলির পাঠা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব দৈনিক ভোরের সূর্যোদকে জানান, মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই পুলিশি পাহারায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে কোনো সহযোগিতার হাত বাড়ানো হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সহযোগিতা করার কথা। আমি খোঁজ নিয়ে জেনে বিস্তারিত জানাবো।