কুমিল্লার হোমনায় নিখেঁাজের তিনদিন পর এক মাদ্রাসাছাত্রের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার রাতে নিহত সজিবের (১০) বাবা গোলাম মোস্তফা তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে খুন ও গুম করা হয়েছে মর্মে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি। লাশ উদ্ধারের পর সন্দেহভাজন হিসেবে মাদ্রাসা সুপার মো. ইয়াসিন, সহকারী শিক্ষক রাকিবুল হাসান আশিক প্রকাশ রুবেল ও মনির হেসেনসহ ৬ জনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। খুনের রহস্য এখনও উদ্ঘাটন করা যায়নি। মঙ্গলবার রিমান্ড চেয়ে আটক সন্দেহভাজন মাদ্রাসা সুপার, সহকারী শিক্ষক ও অপর স্থানীয় এক জনসহ তিন জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়না তদন্ত শেষে বাড়িতে এলে নিহত সজিবের জানাজা ও দাফন করার কথা জনিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সে উপজেলার আছাদপুর ইউনিয়নের ঘনিয়ারচর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে ও আলীপুর ক্বাদেরিয়া হাফেজিয়া সুন্নী মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিল।
বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমার ছেলেকে ইসলাম শিক্ষা ও হাফেজ হতে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। এখন যে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তার যেন উপযুক্ত সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেই প্রার্থনা করি।’
হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, আজ (গতকাল মঙ্গলবার) রিমান্ড প্রার্থনা করে সন্দেহভাজন আটক মাদ্রাসা সুপার মো. ইয়াসিন, সহকারী শিক্ষক রাকিবুল হাসান আশিক প্রকাশ রুবেল ও মনির হেসেনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
হোমনা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মীর মুহসীন মাসুদ রানা বলেন, ’সজিবের এক সহপাঠি বন্ধুর মাধ্যমে খবর পাঠিয়ে তাকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। আমরা সন্দেহভাজন ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। যে খবর পাঠিয়ে সজিবকে নিয়ে গিয়েছিল- সহপাঠি বন্ধুর দেওয়া ওই ব্যক্তির শরীরের গঠন, পরনের পোশাকসহ আনুষাঙ্গিক বর্ণনা অনুযায়ী কয়েকজনকে সেভাবে সাজিয়ে তার সামনে হাজির করেও সনাক্ত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে কাউকেই সনাক্ত করতে পারেনি। তবে আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। আশা করছি এর কোনো না “ক্লু” বের করে প্রকৃত দোষিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর শুক্রবার রাত আটটার দিকে কেউ একজন মাদ্রাসা থেকে সজিবকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। পরে তিনদিন পর ১৬ অক্টোবর সোমবার সকাল বেলায় স্থানীয় এক নারী উপজেলার ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ডোবা থেকে কলসিতে করে পানি আনতে গিয়ে দুর্গন্ধ ও কচুরিপানার নিচে একটি লাশ দেখতে পান। তার চিৎকার শুনে আশেপাশের মানুষজন এগিয়ে আসেন। এ খবর পেয়ে নিহতের পিতা-মাতা ওই স্থানে গিয়ে ছেলে সজিবের লাশ সনাক্ত করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে হোমনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।