কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার কাঠালিয়া নদী এখন দখলদারদের কবলে। দুই নদীর বুকে প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ ঝোপ ফেলে মাছ শিকারের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। এসব ঝোপের অধিকাংশই স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বছরের পর বছর পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও নদী দখল বন্ধ করা যায়নি। বরং দেশীয় প্রজাতির মাছ নিধনের এই ফাঁদ আরও বিস্তৃত হয়েছে। মেঘনা উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নদীর সঙ্গে তাদের জীবন-জীবিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অথচ নদী দখলের কারণে নৌযান চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে এবং নদী পথ এখন চুরি, ছিনতাই ও চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ সরকারের নিজস্ব এবং আত্মীয়স্বজনদের নামে ৩০টিরও বেশি অবৈধ ঝোপ রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নদী দখল করে ঝোপ বসিয়ে কোটি টাকার ব্যবসা করছেন। পেশাদার জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছেন। তাদের মাসোহারা দিয়ে নদীতে নামতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঝোপ ব্যবসায়ী বলেন,আমাদের পূর্বপুরুষরা এ ব্যবসা করতেন। আমরাও করছি। এটা বন্ধ করলে সবারটা বন্ধ করতে হবে, শুধু আমাদের নয়।
স্থানীয় প্রশাসন নামমাত্র অভিযান চালালেও প্রভাবশালীদের চাপে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। চালিভাঙ্গা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আজমগীর হোসাইন বলেন,নদীতে প্রায় দুই শতাধিক ঝোপ রয়েছে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। কিন্তু প্রভাবশালীরা আইন মানছেন না।
মেঘনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হ্যাপী দাস বলেন,মৎস্য কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেঘনার কাঠালিয়া নদীতে ঝোপ বসানোর কারণে মাছের অভয়ারণ্যগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। প্রকৃত জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে প্রভাবশালীদের বাধার মুখে পড়েন। ভয়ে মুখ খুলতেও সাহস পান না তারা।
নদী রক্ষা ও দেশীয় মাছের প্রজাতি টিকিয়ে রাখতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মেঘনার মতো সম্ভাবনাময় একটি উপজেলায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বড় বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।