জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, আওয়ামী লীগ চৌদ্দগ্রামে বিগত ১৫ বছর ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। তারা চৌদ্দগ্রামে কী পরিমান অন্যায়-অত্যাচার ও জুলুম করেছে উপস্থিত জনতা তার জ¦লন্ত স্বাক্ষী। এর বেশি কিছু আমি বলবো না। কারো নাম ধরে আমি সমালোচনা করতে চাইনা। আপনারা নিশ্চয়ই সবই বুঝেন-জানেন। আওয়ামী লীগ বিগত ১৫ বছরে শুধু চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নে তাদের দলীয় আটজন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এবার বুঝে নিন তারা বিরোধী দল-মতের বিরুদ্ধে কেমন অত্যাচার-নির্যাতন করেছিলো। তবে, জুলুমেরও একটা শেষ আছে। মহান আল্লাহর ধরা বড় এবং প্রকৃত ধরা। ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবের সময় ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে রুখে দিতে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার দেশের মানুষকে লাশের মিছিল উপহার দিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এবং ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো স্বৈরাচারের ফিরে আসার নজির নেই।
চৌদ্দগ্রামের শহীদ শিবির নেতা সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারীর স্মৃতির কথা স্মরণ করে এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে অশ্রæসিক্ত নয়নে ডা. তাহের আরও বলেন, আজ শহীদ সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারী বেঁচে থাকলে এ বিশাল প্রোগ্রামে স্বেচ্ছাসেবকের ড্রেস পড়ে আমার সামনে হাঁটাহাঁটি করতো। আজ আমি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এটা মিস করছি। শুধু সাহাব উদ্দিন নয়, চৌদ্দগ্রামের আপামর জনসাধারণের উপর কী অমানবিক অবিচার হয়েছে আপনারা তার স্বাক্ষী। আওয়ামী লীগের আমলে এই চৌদ্দগ্রামের মানুষ সম্মান পেতো না। এখানে আলেম-ওলামা সহ সিনিয়র সিটিজেনদের কোন সম্মান ছিলো না। তাদেরকে সকলের সামনে অপমান করা হতো। আওয়ামী হেলমেট বাহিনী শুধু চৌদ্দগ্রামে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা এ চৌদ্দগ্রামে মাদকের আখড়া বসিয়েছিলো। যুব সমাজকে ধ্বংশের ধারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলো। আজ সময় এসেছে, সম্মিলিতভাবে সকলে মাদককে না বলুন। মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদক চোরাচালানকারীদের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা আছে, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিকভাবে বয়কট করুন। তাদের বিরুদ্ধে জনমত ও তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। প্রশাসনকে অনুরোধ করে তিনি আরও বলেন, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আপনাদের অভিযান অব্যাহত রাখুন। মাদক কারবারিদের দমনে আমরা আপনাদের পাশে থাকবো সবসময়। তবে, কেউ যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে ভালো হতে চায়, মাদক থেকে দূরে সরে আসতে চায়, তাদেরকে পুণর্বাসনে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।
তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে পৌরসভা প্রতিষ্ঠা, ৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ, উপজেলায় ৮৫ ভাগ বিদ্যুতায়ন (৩৫০ কিলোওয়াট), বড় বড় রাস্তাগুলো নির্মাণ অসংখ্য ছোট রাস্তা নির্মাণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ চৌদ্দগ্রামের কিছু মৌলিক কাজ করেছি। আল্লাহ যদি হায়াত দান করেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চৌদ্দগ্রামের মানুষের ভোটে আমি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই, এই চৌদ্দগ্রামে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। চৌদ্দগামে কোনোরূপ অন্যায়-অত্যাচার, খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ও কোন প্রকার জুলুম-নির্যাতন থাকবে না। এ চৌদ্দগ্রাম হবে সমতার চৌদ্দগ্রাম। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সহ সকল ধর্মের লোকজন নিরাপদে থাকবে। দলমত নির্বিশেষে সকলকে সাথে নিয়ে আপনাদের সহযোগিতায় এ চৌদ্দগ্রামকে একটি শান্তির জনপদে রূপান্তর করবো ইনশাআল্লাহ।
সম্মেলনে যুবকদের উদ্দেশ্যে জামায়াত নেতা ডা. তাহের বলেন, আমি চৌদ্দগ্রামের কোনো যুবককে বেকার দেখতে চাইনা। তাদের বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ। যুবকরা হয়তো চাকুরি করবে, না হয় নিজ উদ্যোগে ছোট, মাঝারি ও বড় মাপের ব্যবসা করবে। এক্ষেত্রে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ। আর শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পরে বাহিরে অযথা আড্ডায় সময় না কাটিয়ে পড়ার টেবিলে মনোযোগী হবে। তারা ভালোভাবে পড়ালেখা করে সুশিক্ষিত হয়ে চৌদ্দগ্রাম সহ সারাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ও দেশ গঠনে অবদান রাখার লক্ষ্যে নিজেদেরকে তৈরী করবে। তাদের হাত ধরেই এ দেশ একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে চৌদ্দগ্রাম এইচ জে সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্মরণকালের সেরা যুব সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন, মাওলানা আবুল হাসানাত আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মু. জাহিদুর রহমান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর আব্দুর সাত্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর এডভোকেট মুহাম্মদ শাহজাহান।
সম্মেলনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে বলেন, যখনি জুলাই আন্দোলন চলছিলো, আমরা সিদ্ধান্ত নিতে বসতাম। তখন চিন্তিত হয়ে পড়তাম আর ভাবতাম, আমরা কি পিছনে ফিরে যাবো? তখনি শহীদ আবু সাঈদ সহ সকল শহীদের ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠতো। তখনি মনে হতো, তারা তো জীবন দিয়েছে, আমরা পিছনে ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। তখনি আমরা আবারও আন্দোলন-সংগ্রামের স্পীড পেতাম এবং আন্দোলনে ফিরে যেতাম। আমরা শত শহীদের উত্তরসূরী। তাই আমাদের কেউ দমাতে আসবেন না। এ সময় তিনি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্র-যুবক সহ সকলকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মু. বেলাল হোসাইনের সঞ্চালনায় এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের পুত্র ব্যারিস্টার সৈয়দ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ তাজবীহ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন