কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে সংযুক্ত কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার চরবাকর থেকে এলাহাবাদ, মোহাম্মদপুর হয়ে ভৈষেরকোট পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কটির বেহাল অবস্থা। সড়কটি ছোট-বড় গর্তে বেহাল দশায় দুর্ভোগের শেষ নেই। এ রাস্তায় চলাচলে প্রতিদিন স্থানীয় এলাকার হাজারো মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
প্রশাসনিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিতে এ রাস্তায় ৩টি ইউনিয়ন( এলাহাবাদ, জাফরগন্জ, মোহনপুর) থেকে প্রতিদিন স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া করেন। এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র যোগাযোগের সড়কটি দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্থার না করায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া এলাহাবাদ, মোহাম্মদপুর ও মোহনপুর এলাকাগুলো বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি উৎপাদনে বিখ্যাত। সড়কের বেহাল অবস্থার কারনে কৃষকরা ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হাড়াচ্ছে ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকেও পিছিয়ে পড়ছে এলাকার মানুষ।
বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন শতাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ ট্রাক, লেগুনা ও ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এ সড়কে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ-খোয়া উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দের। বৃষ্টি হলে পানি জমে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে থাকা সড়কের বেশিরভাগ অংশেই খানাখন্দে ভরে গেছে। ছোট-বড় গর্ত এড়িয়ে যানবাহন চলছে এঁকেবেঁকে।
রবিবার (৬আগষ্ট) দিনব্যপী গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ঐ সড়কের মুহাম্মদপুর মাদ্রাসা মার্কেটের সামনে গর্তে অনেক জায়গায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এসময় সড়কে চলাচলকালে যাত্রীবাহি একটি অটোরিকশা বিশাল গর্তে উল্টে পড়ে গেছে। এতে শিশুসহ ৪-৫জন আহত হয়েছে। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় যানবাহনটিকে তুলে দিতে দেখা গেছে। এসময় এলাকার স্থানীয় ব্যাবসায়ী শাহজালাল বলেন, প্রতিনিয়ত এই রাস্তায় দূর্ঘটনার স্বীকার হয়ে হাত পা ভাংচ্ছেন অনেকেই।
চরবাকর এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, রাস্তায় চলার কোনো উপায় এখন আর নেই। এই এলাকায় ৫-৬টি ব্রিকফিল্ডে দিনরাত এই রাস্তায় মাটি ও ইটবাহি ট্রাক্টর চলাচল করে। এখন রাস্তা দেখে মনে হয়না এটা মাটির রাস্তা নাকি পাকা রাস্তা। অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দিলে হয়তো রাস্তার স্থায়িত্ব কিছুটা হলেও বাড়বে।
পিরোজপুর এলাকার আবুল হাসেম মিয়া বলেন, এই সড়কে অ্যাম্বুলেন্স, শত শত ইজিবাইক চলাচল করে। এখন সড়কটির বিপজ্জনক অবস্থা। চলাচলের একেবারে অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।
এলাহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, চরবাকর থেকে এলাহাবাদ, মুহাম্মদপুর, ভৈষেরকোট রাস্তাটির খুবই খারাপ অবস্থা। তারপরও প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এ রাস্তা দিয়েই বাধ্য হয়ে চলাচল করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব দ্রুত যেনো রাস্তাটির সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহন করেন।
সিএনজি, অটোরিকশা চালক হাছান, শিমুল ও গৌতম বলেন, জীবনের তাগিদে যাত্রীদের গালমন্দ ও গাড়ির ক্ষতি মেনেও এই পথ দিয়েই গাড়ি চালাই। তবে রাস্তার অবস্থা এতটা খারাপ হয়েছে, সংস্কার না হলে এই সড়কে গাড়ি চালানো সম্ভব হবে না।
দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, খুব শীঘ্রই চরবাকর থেকে ভৈষেরকোট রাস্তাটির মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ চন্দ্র সরকার বলেন, নতুন একটি প্রকল্প এসেছে ঐ প্রকল্পে রাস্তাটি ইনক্লুড করা আছে। আমরা ইস্টিমিট তৈরি করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে হেড অফিসে পাঠিয়ে দিবো। টেন্ডার হয়ে আসলে কাজ শুরু হবে। আশা করছি জনদূর্ভোগ নিরসনে খুব শিঘ্রই এই রাস্তার কাজ শুরু করতে পারবো।