ব্রাহ্মণপাড়ায় ভয়াবক বন্যায় আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তীব্র চারা সংকটে পড়েছে কৃষকরা। প্রায় দুইমাস পুরো উপজেলায় বন্যার পানি জমে থাকায় বীজতলা ও সদ্য রোপনককৃত আমন ধানের ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। চলতি সপ্তাহে অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও কৃষকরা চারা সংকটের কারণে রোপা আমন ধান চাষ করতে পারছেন না। পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও জেলায় চারা পাওয়া গেলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া চারা সংকটের সুযোগে কয়েক গুন দাম হাকছেন
চারা বিক্রেতারা এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মাঠে কর্তন উপযোগী পাকা আউশ ধান ও বীজতলায় আবাদের জন্য প্রস্তুত রূপা আমন ধানের চারা ঢুবে যায়। এছাড়া বেশ কিছু অনাবাদী জমিতে রোপন করা হয়েছিল আমন ধান। বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায় সবকিছু। এতে এই উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার কৃষক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বন্যার ফলে আমন ধান চাষাবাদের মৌসুম শেষ হয়ে এলেও এখনো আমন চাষের আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু তাদের এই চেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চারা সংকট। এতে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চারা সংকটের কারণে এবার অনেক জমি অনাবাদি থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রাবণ ও ভাদ্র দুই মাস আমন চাষের মৌসুম। চলতি মৌসুমের শুরুতে শ্রাবণ মাসে তারা আমনের বীজতলা তৈরি করেন। কিন্তু কিছুদিন পর ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলে এতে বেশির ভাগ বীজতলা ও রোপনকৃত আমন চারা নষ্ট হয়ে হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে শ্রাবণের শেষে রোপিত বীজতলাগুলোও তলিয়ে গিয়ে সংকট আরো প্রকট হয়। বর্তমানে উঁচু কিছু কিছু এলাকায় থাকা চারা অধিক মূলে কিনে কৃষকেরা চারার সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। তবে এখনো অনেক জমি পানিতে নিমজ্জিত। এসব অঞ্চলের চারা নষ্ট হয়েছে কিংবা পচে গেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা বলেন, এ বছর উপজেলায় ৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় বেশির ভাগ আমনের বীজতলা এবং রোপিত চারা পানিতে নিমজ্জিত হয়। এতে অধিকাংশ চারায় পচন ধরে। বর্তমানে মৌসুমের শেষ সময়ে নতুন করে বীজতলা করে তা রোপণেরও সময় নেই। এসব মিলিয়ে এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন বলেন, আমার আমনের বীজতলায় যে চারা ছিল তাতে নিজের জমি গুলো রোপন করার পর বাকি চারা অন্যদের কাছে বিক্রি করতে পারতাম। বন্যা আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে।
হরিমঙ্গল গ্রামের কৃষক ফরিদ উদ্দিন বলেন, কিনেও কোথাও চারা পাওয়া যাচ্ছে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে অধিক দামে আমনের চারা কিনে এনে এসব চারা সামান্য কিছু জমিতে লাগাচ্ছি। চারা সংকটের কারণে আমার সব জমি লাগাতে পারছি না।
একই গ্রামের কৃষানী নিলুফা বেগম বলেন, বন্যায় আমাদের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে পাশের জেলা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে আট হাজার টাকার চারা কিনে এনেছি। কিন্তু বুঝতে পারছিনা শেষ সময়ে কতটা ফলন করা সম্ভব হবে। এছাড়া জমিতে চাষবাস না করলে আগাছা উঠে জমি নষ্ট হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে চাষ করতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, বন্যা পরবর্তী আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। উপজেলার দুই হাজার কৃষককে বীজ, সার, অর্থ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিন’শ কৃষককে শুধু বীজ দেওয়া হয়েছে। সংকট মোকাবিলায় জমিতে কম করে চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে যে ক্ষতি হয়েছে তা অন্যান্য ফসল আবাদের মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।