কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় গোমতি চড়জুড়ে এখন শীতকালীন সবজির প্রচুর সমাহার৷ নদীর চর জুরে লাল সবুজের সমারোহ। এ যেন লাল সবুজের গালিচায় ডাকা ফসলের মাঠ। রবিশস্য হিসেবে আলু, সরিষাসহ বিভিন্ন শস্যের চাষ হচ্ছে গোমতীর চরে।এলাকার প্রবীণদের তথ্যমতে, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় গোমতি নদীর পাড় জুড়ে থাকত ধান, পাট ও আলু কেনার নৌকা বহর। বড় বড় ধান পাট ব্যাপারীর সমাগম ঘটত ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মালাপাড়া ও রামনগর বাজারে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম ছিল এই গোমতি নদী। কালের বিবর্তনে এক সময়ের খরস্রোতা গোমতি নদী আজ যৌবন হারিয়েছে। মালাপাড়া ইউনিয়নের মালাপাড়া, মনোহরপুর, অলুয়া ও রামনগর এলাকায় এই নদীর চরজোড়ে এখন ধান, আলু ও বিভিন্ন সবজির চাষ হয়।গোমতির চরে দেখা হয় উপজেলার জিরুইন গ্রামের কৃষক কাউছার মিয়ার সাথে। সেখানে তিনি ১৮০ শতক জমি লিজ নিয়ে এতে লালশাক, মুলাশাক ও ডাটা চাষ করেছেন। তিনি প্রতিদিন বিকেলে এসব শাক জমি থেকে তুলে সন্ধার পর পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। এছাড়া তিনি এসব শাক বিভিন্ন হাট বাজারে নিয়ে নিজেই বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, সবজী চাষের জন্য গোমতি নদীর চর বর্তমানে উত্তম। এখানে শীতকালীন শাকসবজির ফলন ভালো হয়। তাই আমি এই নদীর চরে কয়েকজন স্থানীয় কৃষক থেকে (১৮০ শতক) জমি বছর হিসেবে (লিজ) নিয়ে এতে বর্তমানে লালশাক, মুলাশাক ও মাইল্লা (ডাটা) চাষ করেছি। এতে জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজ বপনসহ মোট খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। আমার আবাদকৃত জমি থেকে বর্তমানে আমি এসব শাক তুলে কংশনগর ও সাহেবাবাদ বাজার সহ বিভিন্ন পাইকারদের কাছে বিক্রি করা শুরু করেছি। এছাড়া বাজারের হাটবারে আমি নিজেও এসব শাক বিক্রি করি। আশা করছি আমার উৎপাদিত এসব লালশাক, মুলাশাক ও ডাটা প্রায় দুই লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবো।
ফুলকপির চারা রোপন করছিলেন মালাপাড়া গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, নদীর দুই পাড়ে জেগে ওঠা চরে ফসল খুবই ভালো হয়। কারণ বন্যার পরে পলিমাটি পড়ায় জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সার ও কীটনাশক কম লাগে। ফলনও অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি হয়। এই জন্য এখানে সকলে শাক সবজির আবাদ বেশি করে। আমি এই চরে ৩৫ শতক জমিতে ফুলকপি, ৩২ শতক জমিতে মরিচ ও ২১ শতক জমিতে লালশাক, মুলাশাক চাষ করেছি। এর মধ্যে লালশাক ও মুলাশাক বিক্রি শুরে করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি দামও ভালো পাওয়া যাবে।
কৃষানী নাসিমা বেগম তার আবাদকৃত লালশাকের জমিতে আগাছা পরিচর্যা করছিলেন। কথা হয় তার সাথে তিনি বলেন, আমি ৩০ শতক জমিতে লালশাকের বীজ ফেলেছি। চাড়া উঠেছে। এতে আমার সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এসব শাক বিক্রয় উপযোগী হলে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে বলে তিনি আশা করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাহবুবুল হাসান বলেন, বর্ষার পানি নেমে গেলে মাটিতে পলি পড়ায় গোমতির চরে শীতকালীন ফসলের আবাদ খুব ভালো হয়। তাছাড়া এখানে বছরের বেশির ভাগ অংশই বিভিন্ন ফসল উৎপাদন ভালো হয়। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় চলিত মৌসুমে ৩১০ হেক্টর জমিতে শীতকালী সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে এক তৃতীয়াশং সবজির আবাদ হয়েছে মালাপাড়া ইউনিয়নে ও গোমতি নদীর চরে। সবজি চাষে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় থেকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি শাক-সবজি উৎপাদন হবে। এতে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে গোমতীর চরের শাকসবজি৷