ব্রাহ্মণপাড়ায় বন্যা পরিস্থিতিতে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।
দুই দিকে দুই নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনে চরম বন্যার কবলে পড়েছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া। ঢলের পানিতে ডুবে গেছে ফসলি জমি, ডুবছে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর ও সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ছাড়া চলাচল করা যাচ্ছে না। এতে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে ব্রাহ্মণপাড়ার বন্যা পরিস্থিতি। এরই প্রেক্ষিতে ডিঙি নৌকা তৈরির হিড়িক পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কারিগররা বিভিন্ন আকারের ডিঙি নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ তৈরি করা নৌকায় আলকাতরা মাখাচ্ছেন। কেউ কেউ কাঠ কাটা ও জোড়া দেওয়ার কাজ করছেন। সব মিলিয়ে কারিগরদের জন্য দম ফেলার ফুরসত নেই।
প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন ক্রেতারা। কোনো কোনো ক্রেতা অগ্রিম বায়না দিতে দাঁড়িয়ে আছেন। দাম কিছুটা বেশি হলেও এই বিপদের সময়ে নৌকা পাওয়াই বড় কথা। ছোট-বড় হিসেবে প্রতিটি নৌকা বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে।
জানা গেছে, সাধারণত এই উপজেলায় একসময় নৌকার কদর ছিল। তবে গত তিন দশকে রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে নৌকার চাহিদায় ভাটা পড়ে। তাই এই উপজেলায় তেমন কোনো নৌকা নেই। তবে এবার গোমতী নদীর ও সালদা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অন্যান্য এলাকাও প্লাবিত হচ্ছে। যার ফলে স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর তলিয়ে যাচ্ছে, এ জন্য দীর্ঘ বছর পর আবারও এ উপজেলায় নৌকার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে নৌকা তৈরির কারিগররা নৌকা তৈরিতে মনোনিবেশ দিয়েছেন। ক্রেতারাও নৌকা কিনতে ভিড় করছেন।
নৌকা তৈরির কারিগর শ্রী সাদন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, সারা বছর কাঠমিস্ত্রির কাজ করে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করি। এ উপজেলায় নৌকার তেমন চাহিদা নেই। তাই পুরো বছরে বর্ষা মৌসুমে দু-চারটা নৌকা তৈরি করি। তবে এ বছর দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো ব্রাহ্মণপাড়াও বন্যাকবলিত হওয়ায় হঠাৎ করে নৌকার চাহিদা তৈরি হয়েছে। তাই আমরা কারিগররা এখন সব কাজ ফেলে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছি।
নৌকা কিনতে আসা আবদুল করিম বলেন, আমাদের কখনো নৌকার প্রয়োজন পড়েনি। তবে এ বছর সালদা নদী ও গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনে আমাদের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অন্যান্য এলাকাও প্লাবিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। চলাচলের জন্য এখন নৌকাই ভরসা। তাই নৌকা কিনতে এসেছি। দাম একটু বেশি, তাও নৌকা পাওয়া যাচ্ছে এটাই শুকরিয়া।
নৌকা কিনতে আসা মোঃ বাবুল হোসেন বলেন, গত বিশ বছরে এ ধরনের বন্যা দেখিনি। আমাদের নৌকার কোনো প্রয়োজন পড়ত না। বন্যার কারণে বাড়িঘরে পানি ঢুকছে, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। তাই এখন নৌকা ছাড়া একরকম অচলই বলা চলে। এ জন্য নৌকা কিনতে এসেছি।