কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের মানিকমুড়া গ্রামে বসতঘরে নামাজরত অবস্থায় বৃদ্ধা রাশেদা বেগম (৫৫) খুনের ঘটনায় কুমিল্লার আদালতে ছেলের বৌ, শ্বশুর ও সাবেক চেয়ারম্যান-সহ ৮জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহতের মেজো মেয়ে আয়েশা আক্তার টুম্পা। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৫নং আমলী আদালতে এ হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন নিহতের পোল্যান্ড প্রবাসী একমাত্র ছেলে বেলাল হোসেনের শ্বশুর ও গোহারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরি গোহারুয়া গ্রামের মাহবুবুল আলম কা ন, বেলালের স্ত্রী তাসনিন আক্তার, চাচা শ্বশুর জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ রানা ও অজ্ঞাত আরো ৫জন। এর আগে গত ২৬জুলাই বুধবার রাতে নামাজের বিছানা থেকে ওই বৃদ্ধার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ।
উল্লেখ্য, উপজেলার মানিকমুড়া গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের স্ত্রী রাশেদা বেগম তার পোল্যান্ড প্রবাসী একমাত্র পুত্র বেলাল হোসেনের স্ত্রী তাছনিন আক্তার’সহ একই ঘরে বসবাস করতো। গত কিছুদিন যাবৎ পারিবারিক কলহের কারণে বেলালের স্ত্রী গোহারুয়া গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরিবারিক বিরোধের ঘটনায় ২৭জুলাই বৃহস্পতিবার শালিস বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এর আগের দিন বুধবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের সময় রাশেদার ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস বাবু মায়ের ফোন নাম্বারে কল দিয়ে বন্ধ পেয়ে পাশ্ববর্তী ঘরের মামাত বোন জোৎসনা বেগমের কাছে ফোন করলে তিনি ঘরে গিয়ে সকল বৈদ্যুতিক লাইট বন্ধ দেখতে পায়। পরে সে লাইটের সুইচ দিয়ে নামাজের বিছানায় রাশেদাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার করলে বাড়ির লোকজন এসে রাশেদাকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী লাকসাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উদ্ধারের সময় রাশেদার মাথায় মারাত্মক জখম, গলায় ওড়না পেঁচানো ও জিহবা বের হয়ে ছিল বলে দাবী প্রত্যাক্ষদর্শীদের। পরে ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস একই গ্রামে তার স্বামীর বাড়ি থেকে দৌঁড়ে এসে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশে ও জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ কল করলে পুলিশ গিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাশেদার মৃত দেহ উদ্ধার করে।
নিহতের মেয়ে বিবি হাওয়া, আয়েশা আক্তার টুম্পা ও জান্নাতুল ফেরদাউস বাবু বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারণে আমাদের ভাই বেলালের শ্বশুর মাহবুবুল আলম কা ন দীর্ঘদিন যাবৎ মা, আমরা ও আমাদের স্বামীদেরকে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। সর্বশেষ বেলালের স্ত্রীর বিষয়ে বৃহস্পতিবার সালিশ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সালিশের একদিন পূর্বে বুধবার সন্ধ্যায় আসামীরা আমাদের মাকে হত্যা করে পথের কাঁটা সরিয়ে দিয়ে আমাদেরকে চিরতরে এতিম করে দিয়েছে। এছাড়া হত্যাকারীরা আমার মায়ের পরিহির স্বর্ণের গহনা ও মোবইল ফোন নিয়ে যায়। আমরা এ হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করছি।
জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ওই নারীকে কে-বা কাহারা হত্যা করে তার স্বর্ণ গহনা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। আমি যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের চিহিৃত করে উপযুক্ত শাস্তির দাবী জানাই।