কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পা (২৫) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে তার স্বামী সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ। শনিবার (২৯ জুলাই) রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার টুম্পাকে স্বামীর বাড়িতে হত্যা করে কৌশলে লাশ বাবার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গৃহবধূ টুম্পা জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের কাজী শফিকুর রহমানের মেয়ে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রোববার সকালে মর্গে প্রেরণ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা।
নিহত টুম্পার পিতা কাজী শফিকুর রহমান বলেন, ‘জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পার স্বামী গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) বাহরাইন থেকে দেশে আসে। এ সময় টুম্পা আমাদের বাড়িতে অবস্থান করছিল। শনিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সাইফুল আমাদের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে টুম্পাকে নিয়ে তার নিজ গ্রাম বড়পুষ্করনীর বাড়িতে যায়। সন্ধ্যার দিকে সাইফুল আমাদের বাড়ির সামনে একটি সিএনজি অটোরিকশায় অচেতন অবস্থায় টুম্পাকে নিয়ে এসে বলে “আপনাদের মেয়ে অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। আপনারা আমার সাথে আসেন।” তখন টুম্পার মা নাসিমা বেগম ও আমার এক নিকট আত্মীয়সহ তাকে নিয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়। সেখানে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডাক্তার টুম্পাকে মৃত ঘোষণা করলেও সাইফুল তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা নেবে বলে কৌশলে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে লাশ আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে এবং ঘরে রেখে উধাও হয়ে যায়।’
নিহতের মা নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই টুম্পার স্বামী সাইফুল আমার মেয়ের লাশ ঘরে রেখে উধাও হয়ে যায়। আমরা পরে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। সাইফুল তার বাড়িতে নিয়ে আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।’ তবে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে তা বলতে পারেননি তিনি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক মো: সোলেমান বাদশা বলেন, ‘গৃহবধূ টুম্পাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের কালো চিহ্ন রয়েছে। আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করলে তার স্বামী সাইফুল আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। পরে লাশ উন্নত চিকিৎসার কথা বলে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যায়।’
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে রাতেই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার স্বামী সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সে চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে বাহরাইন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। গৃহবধূর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত বলা যাবে।’