কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পারিবারিক বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে সালেহ আহম্মদ (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে নিহতের বাবা আবুল কাশেম ও ছোট ভাই আব্দুল মতিন সহ আরো দুইজন। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের দেড়কোটা গ্রামের উত্তর পাড়া বেপারী বাড়ীতে। নিহত সালেহ আহম্মদ একই বাড়ীর আবুল কাশেমের ছেলে। সংবাদ পেয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে চৌদ্দগ্রাম থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক মো: আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে উপ-পরিদর্শক সুজন কুমার চক্রবর্তী, নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, সহকারী উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন ও সঙ্গীয় ফোর্স সহ পুলিশের দু’টি পৃথক টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারী মো: জামাল উদ্দিনের মা মনোয়ার বেগম ও স্ত্রী শাহিনুর আক্তারকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আবুল কাশেম (৬২) বাদী হয়ে মঙ্গলবার সকালে হামলাকারী জামাল উদ্দিন (৩২), মহিন উদ্দিন (৩০), জামালের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার (২৭) ও মা মনোয়ারা বেগম (৫৫) সহ চার জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ত্রিনাথ সাহা।
থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের দেড়কোটা গ্রামের বেপারী বাড়ীর আবুল কাশেমের সাথে তার বোন মনোয়ারা বেগম, ভাগিনা জামাল উদ্দিন ও মহিন উদ্দিন এর সাথে সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিলো। এর জের ধরে সোমবার সন্ধ্যায় উঠোন ঝাড়– দেওয়ার মত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষের সৃষ্টি হলে আবুল কাশেমের ভাগিনা জামাল উদ্দিন ও মহিন উদ্দিন সহ পরিবারের লোকজন আবুল কাশেমের ছেলে সালেহ আহম্মদকে উপর্যুপরি ছরিকাঘাত করে। এ সময় তাদের হামলায় আবুল কাশেম ও তার ছোট ছেলে আব্দুল মতিনও আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সালেহ আহম্মদকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সংবাদ পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুমিল্লার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারী জামাল উদ্দিনের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার ও মা মনোয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আবুল কাশেম বাদী হয়ে চারজনের নামে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে আটককৃতদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। উল্লেখ্য, মৃত্যুকালে নিহত সালেহ আহম্মদের স্ত্রী সহ নয় বছর বয়সী এক পুত্র ও যথাক্রমে ছয় ও তিন বছর বয়সী দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। সে উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের নোয়াবাজার এলাকায় একটি বেকারীতে চাকুরি করতো এবং সেখানেই পরিবার নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। এর আগেও আবুল কাশেমের বড় ছেলে নেছার উদ্দিনকে হামলাকারী জামাল উদ্দিন, মহিন উদ্দিন গংরা গুম করেছে বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।
নিহত সালেহ আহম্মদের পিতা আবুল কাশেম বলেন, ‘জামাল উদ্দিন ও মহিন উদ্দিন সম্পর্কে আমার ভাগিনা হয়। সম্পত্তি নিয়ে তাদের সাথে আমার পূর্ব বিরোধ চলে আসছে। সোমবার সন্ধায় আমার প্রতিবন্ধি মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস নিজ উঠোন ঝাড়– দিতে গেলে জামাল উদ্দিন, মহিন উদ্দিন ও তাদের মা মনোয়ারা বেগম আমার মেয়েকে মারধর করে। বিষয়টি নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র (ছুরি) দিয়ে আমার ছেলে সালেহ আহম্মদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। পরে আমি ও আমার ছোট ছেলে আব্দুুল মতিন এগিয়ে গেলে তারা আমাদেরকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের ছুরিকাঘাতে আমার ছেলে ছালেহ আহম্মেদ মারা যায়। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’
মা নাসিমা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই জামাল, মহিন, শাহিনুর ও মনোয়ারা আমার ছেলেকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।’
নিহতের ছোট বোন আছমা আক্তার জানান, ‘আমার ভাইকে তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবুল হাসেম সবুজ বলেন, ‘ছালেহ আহম্মদ এর তলপেটে এবং হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে হাসপাতালে আনার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়েছে।’
চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘সম্পত্তি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে মুন্সীরহাট ইউনিয়নের দেড়কোটায় হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সংবাদ পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হবে। মঙ্গলবার সকালে নিহতের পিতা বাদী হয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। অপর দুই পলাতক আসামীকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।’