রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চান্দিনা উপজেলা শহর থেকে থেকে শুরু করে মাধাইয়া বাজার ও নবাবপুর কাঁচা বাজার সহ গ্রাম-গঞ্জের বেশ কয়েকটি হাট-বাজারে খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম। শুধু আলু ও পেঁপে বাদে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। এসব বাজারে প্রতি কেজি ধনেপাতা ৩০০ থেকে ৩৫০, বরবটি ১৩০, বেগুন ১২০ থেকে ১৬০, ঢেঁড়শ ১০০, ধুন্দুল ৯০ থেকে ১০০, করলা ৮০ থেকে ১০০, মুলা ৮০ থেকে ১০০, লতি ১০০, সিসিঙ্গা ১০০ ও পটোল ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি শিম ৩০০ থেকে ৩২০, টমেটো ২৪০, গাজর ১৩০, কাঁকরোল ১২০, কচুরমুখী ৮০, পেঁপে ৪০ থেকে ৪৫, শসা ৮০ থেকে ১০০, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ১০০ ও আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর প্রতি পিস লাউ ৮০ থেকে ১০০, ফুলকপি ৭০ থেকে ৮০ ও বাঁধাকপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। শাকের বাজারে প্রতি আঁটি পুঁইশাক ৪০, লালশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ডাঁটাশাক ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কাঁচামরিচের দাম বেড়ে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ আগেও যেখানে কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সেখানে কেজি প্রতি প্রায় ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টির প্রভাবে সবজির সরবরাহ কমেছে। সেই সঙ্গে মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় উৎপাদনও কমেছে। ফলে বাড়তি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তবে শীত মৌসুমের সবজি বাজারে আসা শুরু হলে সবজির দাম কমবে।
চান্দিনা কাঁচা বাজারে বিক্রেতা ফিরোজ মিয়া বলেন, পাইকারি সবজিই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দুয়েকটি সবজি ছাড়া কোনোটিই ৮০ টাকার নিচে নেই। বেশিরভাগ সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে। ফলে বেচাবিক্রি কমে গেছে।
চান্দিনা বাজারে কাঁচা বাজার করতে আসা পৌরসভার তুলাতুলি গ্রামের জবেদা খাতুন নামে এক নারী ক্রেতা বলেন- বাবা আমি অনেক দিন পরে কাঁচা বাজার করতে বাজারে আসলাম, এসে সবজির দামের যে পরিস্থিতি দেখছি, বাড়ি থেকে যে টাকা এনেছি তার নাগালের বাইরে সবজির দাম চাচ্ছে বিক্রেতারা। তাই বাজার না করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
এদিকে বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি রুই ৩২০ থেকে ৩৫০, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০, চাষের শিং ৪০০ থেকে ৪৫০, চাষের মাগুর ৫০০, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০, টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ ও তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে ইলিশের দাম স্থির আছে। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি হারে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। আর ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিতে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য কেজিতে গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
মাংসের বাজারে মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। মাছ ও মাংস বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। বন্যায় ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে দাম চড়া।
এদিকে মসলাজাত বাজারে খুচরা ও পাইকারি উভয় ক্ষেত্রে ঝাঁঝ বেড়েছে পেঁয়াজের। খুচরায় প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১২ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ৯৬ টাকায়। প্রতি কেজিতে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২২০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ২৮০ টাকায়।
এছাড়াও অস্বাভাবিকভাবে ডিমের দাম বেড়ে ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিমের দাম রেকর্ড মূল্য ১৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রতি হালি ডিমের দাম ৬০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা। ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, গত কয়েক দিনে মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেশি তাই স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারেও দাম বেশি।
জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম বাড়লেও তাদের উপার্জন বাড়েনি। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এত বেশি যে বাজারে যেতেই ভয় হয়। বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে হু-হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তারা।
এব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন জনান, ইতিমধ্যে জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিষয়টি আমার নজর এসেছে। কয়েকটি বাজার মনিটরিং করা হয়েছে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেব ।